মুখে চুইংগাম, চোখে শীতল চাহনি - ব্র্যাডম্যান ও শচিনের মধ্যিখানে আজও তিনিই ‘রাজা’

"শচিন না ব্র্যাডম্যান?"
"শচিন।"
"না না, ব্র্যাডম্যান!"
"আর রিচার্ডস?"

আরও পড়ুন
বড়ো চাকরি ছেড়ে ক্রিকেট, ভালোবাসেন গিটার ও সুমনের গান, অনুষ্টুপের জীবন তাঁর ব্যাটিং-এর মতোই ধ্রুপদী

'থোমো' আর লিল্লির পরেই অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় উঠতি পেসার রডনি হগ। বলের গতি ভয়ংকর, মাঝেমধ্যে বিষাক্ত বাউন্সার। বলা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার আগুনে বোলিং লাইন আপের তিন-নম্বর ঘুঁটি। ১৯৮৪-৮৫ সিরিজ। অ্যাডিলেডে খেলা চলছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। হগের বল রিচার্ডসের চোয়ালে আছড়ে পড়ল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিম হাঁ হাঁ করে উঠেছে। এই গেলেন বুঝি। হগ মিচকি হাসছেন, শয়তানিতে যোগ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া দল। রিচার্ডস ভাবলেশহীন। বোধহয় ওভারের তৃতীয় বল। আবার বাউন্সার। কিন্ত উইকেটের উপর দিয়ে কাট করে ছয়। এবার অস্ট্রেলিয়ার কাঁদার পালা। অন্য কোনো ব্যাটসম্যান হলে, আনন্দের আতিশয্যে যা নয় তাই করে বসত। রিচার্ডস নির্বিকার। যেন কিছুই হয়নি। ব্যাটটা হালকা ঠুকে আবার স্টান্স নিচ্ছেন…

আরও পড়ুন
অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল আজ, চিনে নিন ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের

এরে কয় ‘সোয়াগার’। একটা 'ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাব। ‘কাউকে পরোয়া করি না’ গোছের। মহম্মদ আলি যেমন রিং-এ ঢুকতেন, যেন ঠিক সেই কায়দায় ব্যাট করতে নামেন এন্টিগার 'রাজা' ভিভিয়ান। মুখে চুইংগাম। হেলমেট নেই। লম্বা, সুগঠিত দেহ। ব্যাটে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে, জরিপ করছেন মাঠ। প্রতিপক্ষ দলে ফিসফাস। ফাস্ট বোলারদের উপর অলিখিত নির্দেশ থাকত, "আর যাই করো, দোহাই এই লোকটার-এর সাথে পাঙ্গা নিতে যেও না। কেরিয়ারের সাড়ে ষোলটা বাজিয়ে দেবে।"

আরও পড়ুন
৮ বছর বয়সে হাত খুইয়েও ছাড়েননি খেলা, রাজ্যের অধিনায়কও হয়েছেন এই ক্রিকেটার

যেমন 'দুর্বোধ্য' বলই আসুক, তিনি খেলবেন। খেলবেনই। মর্জিমাফিক মারবেন। বাড়াবেন কিংবা কমাবেন রান-রেট। নিয়ন্ত্রণে রাখবেন ম্যাচের গতি। কিন্তু চটিয়ে দিলে এমন সংহারমূর্তি ধারণ করবেন, যে বোলারদের 'ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি' অবস্থা। এসব জানা কথা। পিচের সত্য।

অধিনায়ক থাকাকালীন সিরিজ হারেননি একটাও।

আরও পড়ুন
৮৭-তেও তরুণী ছিলেন তিনি, প্রয়াত ভারতীয় ক্রিকেটের ‘সুপারফ্যান’ চারুলতা প্যাটেল

১৯৭৬ ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্টের আগে, ইংল্যান্ড অধিনায়ক টোনি গ্রেগ বলে বসলেন, "I intend… to make them grovel." বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই তখন তুঙ্গে। সেই পরিসরে এমন বর্ণবিদ্বেষ সইতে হল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। চোয়াল শক্ত করে লকার-রুমে বসে ছিলেন 'রাজা'। ম্যালকম মার্শালের জবানিতে, "রিচার্ডস-কে দেখে সেদিন বুঝলাম, ইংল্যান্ডের দিন ঘনিয়ে এসেছে।" হলও তাই। পিটিয়ে সিধে করে ফেরত পাঠালেন ব্রিটিশ বোলারদের। দু-দুটো ডাবল সেঞ্চুরি। টোনি পরে বলেছিলেন "ওটা আমার জীবনে মস্ত বড় ভুল ছিল। ঐতিহাসিক ভুল।"

আরও পড়ুন
কোনো ক্রিকেটার নন, সেবার মাঠকর্মীরাই পেয়েছিলেন ‘ম্যান অব দ্য মাচ’ পুরস্কার

টেকনিক অসামান্য রিচার্ডসের। হাতে ছিল সবরকম ক্ল্যাসিকাল শট। খেলার ভক্ত ছিলেন বিখ্যাত আম্পায়ার ডিকি বার্ড। তাঁকে রীতিমতো ভয় পেতেন আল্যান বর্ডার, ইমরান খান। সত্যি বলতে গেলে এমন ঝোড়ো অথচ মনোরম ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা খোঁজা ভার।

আরও পড়ুন
ফুটবল ও ক্রিকেট – দুই খেলাতেই ময়দান কাঁপাতেন বাংলার চুণী গোস্বামী

রিচার্ডস-এর প্রিয় খেলোয়াড়, গাভাসকার কিংবা শচিন। ইদানিংকালের সাক্ষাৎকারে অকপটে কাছে টেনে নিয়েছেন বিরাট কোহলিকে…

রেকর্ডবুকেও তিনি শচিন ও ব্র্যাডম্যানের ঠিক মাঝখানে। আজ তাঁর জন্মদিন।