খুব শীঘ্রই ‘ফুটবলের মক্কা’ মুখরিত হতে চলেছে ‘ইউ নেভার ওয়াক আ্যলোন’-এর ধ্বনিতে। লিভারপুল ফুটবল ক্লাবের (Liverpool Football Club) কলকাত্তাইয়া সমর্থকরা আয়োজন করছেন ‘বেঙ্গল স্কাউজারস লিগ ২.০ (Bengal Scousers League 2.0)।’ যেখানে বল পায়ে ভেল্কি দেখাবে লিভারপুল সমর্থক-ব্রিগেড। লিভারপুল গ্রেটদের নামে নামাঙ্কিত ছ'টি দল, ইতিমধ্যেই জোরকদমে শুরু করে দিয়েছে প্র্যাকটিস। শ্যাঙ্কলি সোলজার্স, ড্যাগলিশ ড্যাজলার্স, পেইজলি প্যান্থার্স, রাশ রেঞ্জারস, ফাউলার ফ্যালকন্স, এবং জেরার্ড জায়ান্টসের মধ্যে জমে উঠবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
কলকাতায় ২০১৩ সালের আগেও লিভারপুল সমর্থকরা খানিক একলাই পথ হাঁটতেন। কারণ তখন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কাঁপাত, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং চেলসি। তাদের সমর্থকদের মধ্যে রেষারেষিও ছিল চোখে পড়ার মতো। অন্যদিকে একটার পর একটা হারে জর্জরিত শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ফুটবল ক্লাবটি ছিল ফুটবলবিশ্বের হাসাহাসির পাত্র। ফলে জনসমক্ষে খানিক গা-ঢাকা দিয়েই চলতেন সমর্থকরা।
“বেঙ্গল স্কাউজারস এমন একটা দমবন্ধ সময়েরই ফসল।” বলছিলেন লিভারপুল ফ্যান অয়নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। অয়নেন্দু বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। অফিসের কাজে একটু ফুরসৎ মিললেই চলে যান মাঠে। সতীর্থদের সঙ্গে মেতে ওঠেন ফুটবল উৎসবে।
আরও পড়ুন
গয়না চুরির অভিযোগ অধিনায়কের বিরুদ্ধে! বিশ্বকাপ খেলার আগেই আটক ববি মুর
“২০১৩ সালে প্রত্যয় মৈত্র, অভিরূপ সেন, দীপাঞ্জন নন্দী মতো কয়েকজনের হাত ধরেই তৈরি হয়েছিল বেঙ্গল স্কাউজারস। এঁদের মধ্যে অনেকেই পশ্চিমবঙ্গে লিভারপুল স্বীকৃত ফ্যানক্লাব ‘বেঙ্গল কপ’-এর পদাধিকারী। উদ্দেশ্য ছিল, কলকাতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লিভারপুল ফ্যানদের একসূত্রে বাঁধা। নানা ধরনের কর্মসূচির পাশাপাশি খুব স্বল্প সামর্থ্যেই শুরু হয়েছিল একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট। তবে দুঃখ বেশিদিন রইল না। এর দু'বছর পরেই ডর্টমুন্ড থেকে বদলি হয়ে আসেন জুর্গেন ক্লপ।” প্রিয় সঙ্ঘের ইতিহাস ছুঁয়ে যাচ্ছিলেন অর্ঘ্য দাস। সুদূর কাঁকিনাড়া থেকেও নিয়মিত ‘স্কাউজারস’-এর বিভিন্ন কর্মসূচি ও খেলায় অংশ নিতে আসেন এই কট্টর লিভারপুল ভক্ত।
আরও পড়ুন
দৃষ্টিহীনদের জন্য বিশেষ ফুটবল! অভিনব এই খেলার আঁতুড়ঘর উগান্ডা
বিশ্ববন্দিত জার্মান কোচ যে বর্তমান লিভারপুলের অন্যতম স্তম্ভ, বলাই বাহুল্য। তাঁরই হাত ধরে ক্লাবে একে একে এসেছে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, উয়েফা সুপার কাপ, ইউরোপিয়ান কাপ ও এফএ কাপ। এবং ২০২০ সালে মো সালাহ, সাদিও মানে, ববি ফিরমিনো, জর্ডন হেন্ডার্সন, ভার্জিল ভ্যানডাইকরা ঘরে আনলেন ঐতিহাসিক ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। একদা হতশ্রী ক্লাবের ট্রফি ক্যাবিনেট ধীরে ধীরে ভরেছে খেতাবে। ইউরোপের ক্লাবগুলির কাছে এই সোনালি প্রজন্মের লিভারপুল হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য শক্তি।
লিভারপুলের এই ‘সত্যি রূপকথা’ সমর্থকদের মনোবল যে বাড়িয়ে তুলেছে, বলাই বাহুল্য। ক্রমে কলেবরে বেড়েছে ‘বেঙ্গল স্কাউজারস’। বেড়েছে সদস্যসংখ্যা। ফলে এবার টুর্নামেন্ট নিয়ে খানিক বড়রকম স্বপ্নই দেখছেন ‘স্কাউজারস’রা। ১০ সেপ্টেম্বর, নাগেরবাজারে আদিত্য স্কুল অফ স্পোর্টসের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে ফুটবল টুর্নামেন্ট। যার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছে ‘ওয়েলথ প্যানাসিয়া ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস’ এবং ‘ড্রেসিং রুম-১০'। স্টুডিও পার্টনার হিসাবে থাকছে ‘র্যামেক্স প্রোডাকশনস’। সারাদিনব্যাপী এই রাউন্ড রবিন টুর্নামেন্টের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে গতমাস থেকেই। উদ্দেশ্য—টুর্নামেন্টের মাধ্যমে বেঙ্গল স্কাউজার্সের ফুটবল টিমকে আরো শক্তিশালী করে তোলা। যে টিম ইতিমধ্যেই অংশ নিয়েছে শহরব্যাপী নানা ফুটবল টুর্নামেন্টে।
প্রধানত বিদেশি ক্লাবের সমর্থকদের আয়োজিত এমন ফুটবল টুর্নামেন্টের সংখ্যা বাংলায় খুব বেশি নয়। কিন্তু কলকাতা মাঠ বহুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক। বিভিন্ন বিদেশি ফুটবল ক্যাম্পে আজকাল ডাক পাচ্ছে বাংলার ছেলেরা। ফলে বাংলায় ফুটবল-সংস্কৃতির বিকাশের জন্য এইধরনের উদ্যোগ যে নিঃসন্দেহে ফলপ্রসূ হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
Powered by Froala Editor