দেশের একমাত্র সংক্রমণমুক্ত রাজ্য সিকিম, অক্টোবর পর্যন্ত নিষিদ্ধ পর্যটকদের প্রবেশ

সারা ভারতেই ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণের সংখ্যা। অঙ্ক ছাড়িয়েছে সাড়ে ২৪ হাজার। কিন্তু এই মহামারীর এতটুকু আঁচ পড়েনি সিকিমে। ভারতের একমাত্র রাজ্য হিসাবে সিকিমে, আক্রান্তের সংখ্যা কার্যত শূন্য। কিন্তু সাবধানের কোনো মার নেই। তাই বিপদমুক্ত থেকেও, কঠিন সতর্কতা অবলম্বন করছে সিকিম সরকার। বৃহস্পতিবার চিনের সঙ্গে সংযোগকারী নাথুলা গিরিপথ বন্ধ করে দিয়েছিল সিকিম। এবার পর্যটকদের সিকিমে প্রবেশও নিষিদ্ধ করল সরকার।

আরও পড়ুন
লকডাউনে খুলতে পারে স্থানীয় দোকান-বাজারগুলি, ঘোষণা কেন্দ্রের

উত্তর-পূর্ব ভারতের ছোট্ট এই রাজ্যে বসবাস মোট সাত লক্ষ মানুষের। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত সিকিম, চোখ ধাঁধানো প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সেখানকার সংস্কৃতি, পর্যটকদের আকর্ষিত করে চিরকালই। সেখানকার বেশিরভাগ মানুষের জীবিকাও জড়িয়ে আছে এই পর্যটনশিল্পের সঙ্গেই। বিশেষত, প্রতিবছর এই সময়ে উপচে পড়া ভিড় থাকে সিকিমে।

আরও পড়ুন
গার্হস্থ্য হিংসার শিকার পড়ুয়া, আশ্রয় দিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাই

ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে তৎপরতার সঙ্গেই বন্ধ করা হল পর্যটন শিল্প। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর, বাইরে থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাবে। কারণ, বিশেষজ্ঞদের মতে দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হতে সময় লাগে অনেকটাই। এই মুহূর্তেই বহিরাগমন বন্ধের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। এমনটাই মনে করছে সিকিম সরকার।

আরও পড়ুন
লকডাউনে বিক্রি বন্ধ, প্রিয় হকার-কাকুদের পাশে প্রেসিডেন্সির ছাত্রছাত্রীরা

সিকিমের রাজ্যপাল এদিন ঘোষণা করেন, অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে সিকিমে পর্যটকদের প্রবেশ। সাত লক্ষ মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত, জানান তিনি। পাশাপাশি অভিবাসী শ্রমিকদেরও ফিরে যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকেই সরবরাহ করা হচ্ছে খাদ্যদ্রব্য। তাঁদের দেওয়া হচ্ছে দৈনিক পারিশ্রমিকও। লকডাউন উঠলেই তাঁদের সাহায্যই যে জরুরি হয়ে পড়বে রাজ্যে, সেকথা অকপটে স্বীকার করেছেন রাজ্যপাল।

আরও পড়ুন
ভারতে সংক্রমণের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ লক্ষ ৩৬ হাজার, অনুমান দুই জার্মান বিজ্ঞানীর

করোনার সংক্রমণের শুরু থেকেই সাবধানতা অবলম্বনে যথেষ্ট তৎপর ছিল সিকিম। বাতিল করা হয়েছিল কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা। প্রতিবছর জুন থেকে সেপ্টেম্বরের সময়ে হয় এই যাত্রা। আয়োজন করে বিদেশমন্ত্রক। মানস সরোবরের দুটি ভিন্ন ভিন্ন যাত্রাপথ রয়েছে। একটি সিকিমের নাথুলা পাশ হয়ে। অন্যটি উত্তরাখণ্ডের লিপুলেখ গিরিপথের মধ্যে দিয়ে। কয়েকশো মানুষ প্রতিবছর যান মানস সরোবর অভিযানে। নাথুলা গিরিখাত হয়ে তিব্বত যাত্রার সমস্ত কর্মসূচিই মার্চের শুরুতে বাতিল করেছিল সিকিম সরকার।

আরও পড়ুন
কম খরচে ভেন্টিলেটর তৈরি করে বিশ্বদরবারে স্বীকৃতি যাদবপুরের দুই পড়ুয়ার

উল্লেখ্য, সিকিমই ভারতের প্রথম রাজ্য যা লকডাউনের আগেই বন্ধ করে দিয়েছিল পর্যটকদের আগমন। এছাড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল, দেশে সংক্রমণ হওয়ার ঠিক পরপরই। চিন, নেপাল এবং ভুটান তিন প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে সিকিমের। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সিকিমের রয়েছে চারটি চেকপোস্ট। যার মধ্যে দুটি মাধ্যমেই কেবল জরুরী সামগ্রীর আদানপ্রদান চলছে। রাজ্যের মানুষকে নিরাপত্তাপ্রদানই এখন প্রধান লক্ষ্য সরকারের। বলাই বাহুল্য, এ কথা মাথায় রেখেই দীর্ঘমেয়াদি পর্যটনশিল্প বন্ধের ঘোষণা। যা যথেষ্ট বলিষ্ঠ এবং সাহসী পদক্ষেপ সরকারের।