গার্হস্থ্য হিংসার শিকার পড়ুয়া, আশ্রয় দিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাই

করোনা— জীববিজ্ঞানের দিক থেকে দেখলে একটি ছোট্ট, আণুবীক্ষণিক ভাইরাস। কিন্তু এটিই আমাদের ঘরের ভেতর বন্ধ করে রেখেছে। সমস্ত কিছু বন্ধ একপ্রকার। বাড়ির ভেতর বন্ধ থাকলে, করোনার থেকে তো খানিক দূরে যাওয়া হল। কিন্তু অন্যান্য সমস্যা? সেগুলো তো গিলে ধরছে এখন। সেরকমই একটি ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন এক ছাত্রী। আর তাঁকে সাহায্যের জন্যই এগিয়ে এলেন তাঁর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা।

ঠিক কী ঘটেছিল? যে ছাত্রীটির কথা বলা হচ্ছে, তিনি নিজে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা করছেন। লকডাউনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। ছাত্রীটি নিজে থাকেন গড়িয়ায়, তাঁর পরিবারের সঙ্গে। সেখানেই শুরু হয় সমস্যা। সূত্রে খবর, ওই ছাত্রীর বাবা এবং ভাই দুজনেই মানসিকভাবে অসুস্থ। সেই নিয়ে অনেক সমস্যা এমনিই চলছিল। হঠাৎ করে লকডাউনের মধ্যেই ওঁরা দুজন মেয়েটির ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কারণ অজানা। এমনকি, প্রাণনাশেরও চেষ্টা করা হয়!

স্বাভাবিকভাবেই, নিরাপত্তার কারণেই বাড়ি ছাড়ার কথা ভাবে মেয়েটি। মেস বা পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকার কথাই আগে ঠিক হয়। যাদবপুরের কাছাকাছিই খোঁজ চলতে থাকে, যাতে কলেজে যেতে অসুবিধা না হয়। একটি ঠিকও করা হয়, কিন্তু করোনার ‘আতঙ্কের’ জন্য মেয়েটিকে থাকতে দেওয়া হয় না সেখানে। অবশেষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরাই তাঁর সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেন।

বন্ধুরা মিলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, উপাচার্য সবার কাছে একটু সাহায্য করার আবেদন জানান। ও তো যাদবপুরেরই ছাত্রী, যদি এখানেই আশ্রয় দেওয়া হয়! এমনিতেও তো কোয়ারান্টাইনেই তো থাকতে হবে। প্রথমে অবশ্য সেখান থেকেও বাধা আসে। এরকম ভাবে ব্যবস্থা করা তো মুশকিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয়েরই বিজ্ঞান বিভাগের স্টুডেন্ট ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মেয়েটির থাকার ব্যবস্থা করা হয়। আনন্দের বিষয়, এই প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলাম আমরা, প্রহর.ইন-ও।

বিপদের দিনে যখন নিজের বাড়িও নিরাপদ মনে হচ্ছে না, তখন এইভাবে এগিয়ে আসা বন্ধুত্বের হাত আমাদেরও অনেকটা ভরসা দেয়। ভরসা দিল ওই ছাত্রীটিকেও। আর কিছু হোক না হোক, তাঁর বন্ধুরা তো আছে! তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় আছে! এভাবেই মানুষের পাশে মানুষ এসে দাঁড়াচ্ছে। করোনা এভাবেই আমাদের মানবিক মুহূর্তগুলোকে চিনিয়ে দিয়ে যাক।

Latest News See More