অরুণাচলের হিমালয়ের কোলে চিরসবুজ মনোরম বনভূমিতে ঘেরা দিবাং উপত্যকা। এর অপরূপ সৌন্দর্যের টানে ভিড় জমান বহু পর্যটক। তবে সেই চেহারা বোধহয় আর বেশিদিন থাকবে না। আধুনিক মানুষের উন্নয়নের যাঁতাকলে পড়ে পৃথিবীর বুক থেকে সবুজ তো প্রায় মুছেই যাচ্ছে। সেই তালিকাতেই হয়তো যোগ হতে চলেছে দিবাং উপত্যকার নাম। কারণ এই বনভূমির বুকে অরুণাচলপ্রদেশ হাইড্রো পাওয়ার কর্পোরেশন এবং জিন্দাল পাওয়ার লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হতে চলেছে একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ইতিমধ্যে কেন্দ্র সরকারের ফরেস্ট অ্যাডভাইজারি কমিটি থেকে এই প্রকল্পের ছাড়পত্রও পাওয়া গিয়েছে। আর এর ফলে কেটে ফেলা হবে ১১৫০ হেক্টর বনভূমি। প্রায় ২.৭ লক্ষ গাছ কাটা পড়বে। আশ্রয় হারাবে বহু বন্য প্রাণীও।
অরুণাচলের এই গভীর বনভূমিতে প্রায় ৪০০ প্রজাতির গাছের বাস। এর মধ্যে অনেক গাছ রীতিমতো বিরল প্রজাতির। তাছাড়া আছে অনেক প্রজাপতি, বাঁদর, কাঠবেড়ালি ও অসংখ্য পাখি ও হরিণ। জঙ্গলের মধ্যে অবশ্য বাঘের অস্তিত্ব নেই, তবে আশেপাশের অনেক বাঘের জীবন এই জঙ্গলের উপর নির্ভরশীল। এমন একটি বনভূমি এভাবে কেটে ফেলা নিয়ে তাই স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ফরেস্ট ইন্সপেক্টর জেনারেল অঞ্জন মোহান্তি অবশ্য দাবি করছেন, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এবং বাস্তুতন্ত্র রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় মানুষের পক্ষ থেকেও কোনো বিরোধিতা করা হয়নি। অবশ্য পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী জর্জ তানা তারার বক্তব্য, স্থানীয় মানুষের কোনো কথাই শোনা হয়নি। এবং এই বিরাট বনভূমি ধ্বংস করে বাস্তুতন্ত্রের রক্ষাও সম্ভব নয়।
সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনায় পরিবেশ বিষয়কে কেন্দ্র করে বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে কেন্দ্র সরকারকে। পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে সচেতনতা। অবশ্য তার সঙ্গে আধুনিক মানুষের জীবনযাত্রার দ্বন্দ্বও ক্রমশ পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে কি আদৌ মানুষের জীবনযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। দ্বন্দ্ব আর বিতর্কের মধ্যেই হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে।