বিশালতার শহর নিউ ইয়র্ক। শহরের বুকে সমস্ত অট্টালিকাই যেন আকাশ ছুঁতে চায়। তবু এই সব কিছুর মধ্যে প্রায় ১০০ বছর ধরে টিকে আছে ছোট্ট একটুকরো জমি। রাস্তার উপর একটি ত্রিকোন ফলক। আর এই ফলকটিই পৃথিবীর সবচেয়ে ছোটো রিয়েল এস্টেট। কত ছোটো? সব মিলিয়ে জমির আয়তন মাত্র ৩৫০ বর্গ ইঞ্চি। হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও সত্যিই এমন একটি রিয়েল এস্টেটের অস্তিত্ব আছে। আর তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক অবাক করা ইতিহাসও।
এই কাহিনির শুরু ১৯১০ সালে। সেবছর নিউ ইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে, শহরের মাঝ দিয়ে এঁকেবেঁকে শিরার মতো চলে যাওয়া অসংখ্য রাস্তা যে গোলকধাঁধা তৈরি করে, তা ঠিক আধুনিক পরিবহণ ব্যবস্থার উপযুক্ত নয়। আর তাই বদলে ফেলতে হবে শহরের মানচিত্রই। ১৯১৩ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের সুপারিশ অনুযায়ী তৈরি হল নতুন পরিকল্পনার খসড়া। প্রথমেই চওড়া করতে হবে সেভেন্থ অ্যাভেনিউকে। তারপর একটি সাবওয়ের ব্যবস্থাও করতে হবে। আর এই পরিকল্পনা সফল করতে গেলে বেশ কিছু নতুন ও পুরনো অট্টালিকা ভেঙে ফেলতে হবে।
নগর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে অবশ্য প্রথমে আপত্তি জানিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু সরকারি ফরমানের কাছে শেষ পর্যন্ত সেই আপত্তি টেকেনি। শুধু ডেভিড হেস নামে এক ব্যক্তি এই ফরমান মেনে নিতে অস্বীকার করলেন। ১৯১৮ সালে মামলা উঠল আদালতে। তাতে অবশ্য পরাজয় হল ডেভিড হেসের। শেষ পর্যন্ত ‘ভুরিজ’ নামে তাঁর ৫ তলা বাড়িটিও দখল নিল নগর উন্নয়ন সংস্থা। সেভেন্থ অ্যাভেনিউ চওড়া হল। আই-আর-টি ব্রডওয়েও তৈরি হল। কিন্তু এর মধ্যেই হঠাৎ একটা জিনিস লক্ষ করল নগর কর্তৃপক্ষ। জমি অধিগ্রহণের সমস্ত কাগজ যখন তৈরি হয়েছে, তখন একটা ছোট্ট ত্রিকোণ অংশ বাদ পড়ে গিয়েছে। খাতায় কলমে সেটা তখনও ডেভিড হেসের সম্পত্তি।
নতুন করে অধিগ্রহণের জন্য কাগজপত্র তৈরি করতে থাকে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কার কাছ থেকে অধিগ্রহণ করবেন? ডেভিড হেস তো ততদিনে প্রয়াত হয়েছেন। আর তাঁর উত্তরাধিকারীদের কাছে এই জমির জন্য আবেদন জানানো হলে তাঁরাও মালিকানা বদলে অসম্মত হন। সেভেন্থ অ্যাভেনিউ আর ক্রিস্টোফার স্ট্রিটের মাঝে একটি ত্রিভুজ থেকে গেল ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে। সেই ত্রিভুজের একটি বাহু ২৫.৫ ইঞ্চি আর বাকি দুটি ২৭.৫ ইঞ্চি। ডেভিড হেসের উত্তরাধিকরীরা ঠিক করলেন, ওই এলাকায় হেসের স্মরণে একটি ফলক বসানো হবে। ১৯২২ সালে সেই ফলক বসানো হয়। আজও সেভেন্থ অ্যাভেনিউ আর ক্রিস্টোফার স্ট্রিটের মাঝে দেখা যায় সেই ফলক। তার গায়ে লেখা আছে, “প্রোপারটি অফ হেস এস্টেট হুইচ হ্যাজ নেভার বিন ডেডিকেটেড ফর পাবলিক পারপাস’।
ব্যক্তি মালিকানার লড়াইতে ডেভিড হেসের কথা মনে রাখতেই আজও যত্ন নিয়ে রক্ষা করা হয় এই ফলক। এর মধ্যে ১৯৩৮ সালে একবার একটি দোকানের মালিক জায়গাটি কিনে নেন। ১৯৯৫ সালে মালিকানা চলে যায় ইয়েশিভা ইউনিভার্সিটির হাতে। এখনও অবধি ৭০ বারের বেশি মালিকানা বদল হয়েছে ছোট্ট এই রিয়েল এস্টেটটির। তবু আজও অক্ষত আছে সেই ফলক। আর অক্ষত আছে ডেভিড হেসের স্মৃতি।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পৃথিবীর ইতিহাসে ‘বৃহত্তম’ পাখির সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা