রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ২৮৮ দিন অনশনের পর কারাগারেই মৃত গায়িকা

গানই ছিল তাঁর সৃষ্টির মাধ্যম, তাঁর সত্তা। আর এই গানই ছিল তাঁর কাছে প্রতিবাদের হাতিয়ার। রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও অপশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি ও তাঁর দল। রাষ্ট্র গ্রেফতার করলেও, প্রতিবাদ থামেনি। চালিয়ে গিয়েছিলেন অনশন। ২৮৮ দিন পর মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে সেই অনশন থামালেন তুর্কির গায়িকা হেলিন বোলেক। তাঁর এই মৃত্যু শুধু তুর্কিতে নয়, গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করল।

আরও পড়ুন
নিকারাগুয়া বিপ্লবের প্রাণপুরুষ তিনি, ৯৫ বছরে চলে গেলেন আর্নেস্টো কার্দেনাল

হেলিন বোলেক যেন তুরস্কের ‘চরণ দাস’। আর ‘হীরক রাজের’ ভূমিকায় সরকার, সমাজ, পুঁজিবাদ। গানের মধ্যে দিয়েই তাদেরকে জবাব দিতে লাগলেন হেলিনরা। ১৯৮৫ সালে তৈরি হয় গানের দল ‘ইয়োরাম’। সেই দলেরই অন্যতম সদস্যা ছিলেন হেলিন। মূলত লোকগানকে আশ্রয় করেই নিজেদের কথা সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন তাঁরা। নিজেদের কথা তো বটেই, সেখানে ছিল সমাজ, রাষ্ট্রের কথাও। বিশ্বের নানা জায়গায় অনুষ্ঠানও করেছে এই দল। কিন্তু এত সত্যি কথা কি রাষ্ট্র সহ্য করতে পারে? ইয়োরামের প্রত্যেক সদস্যকেই চোখে চোখে রেখেছিল তারা। পরে ২০১৬ সালে গোটা দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তুরস্কের সরকার।

আরও পড়ুন
ফাঁসির দড়িতে বন্ধুত্ব আরও ঘন হয়েছিল বিপ্লবী ‘শায়র’ রামপ্রসাদ আর আসফাকউল্লাহ-র

শুধু সেখানেই থেমে যায়নি সবটা। দলের সদস্যদের গ্রেফতার করাও শুরু হয়। চলে নির্যাতনও। তাও ভয় পাননি হেলিন বোলেক। চালিয়ে গিয়েছিলেন প্রতিবাদ। শেষে ২০১৯-এর শুরুর দিকে তাঁকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর শুরু হয় আসল লড়াই। জেলের ভেতরেই আমরন অনশন শুরু করেন হেলিন। লোকসঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত হল আরও একটি অস্ত্র। তাঁর সঙ্গে আরও এক ব্যান্ড মেম্বার, ইব্রাহিম গোশেকও অনশন শুরু করেন। নভেম্বরে তাঁদের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও, বন্ধ হয়নি সেই কাজ। নিজেদের জন্য তো এই অনশন নয়, এই লড়াই তো মানুষের অধিকারের জন্য; পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে। ২৮৮ দিনের এই লড়াই অবশেষে শেষ হল। প্রয়াত হলেন হেলিন বোলেক।

আরও পড়ুন
কয়েকটি মাত্র শব্দ জুড়ে জুড়ে ধর্মসংগীতকে প্রতিবাদের গানে বদলে নিলেন পিট সিগার

অবশ্য এখানেও লড়াই শেষ হয়ে যায়নি। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকেই শোকবার্তা পৌঁছেছে। কিন্তু যে লড়াই শুরু করেছিলেন হেলিন, সেটা তো শেষ হয়নি! হতে পারে না। হেলিন নিজের জিবন দিয়ে আরও মশাল জ্বালিয়ে গেলেন। ‘কারার ওই লৌহকপাট’ ভেঙে পৃথিবীকে মুক্ত করতে হবে। হেলিনের জীবন বৃথা যেতে পারে না…