করোনার মোকাবিলা করতে সামনে থেকে লড়ে যাচ্ছে দেশের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে, কাজ কঠিন হচ্ছে চিকিৎসকদের। সরঞ্জামের অভাব ভাবিয়ে তুলছে তাঁদের। তবে এই লড়াইয়ে তাঁরা একা নন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির গবেষণা এবং আবিষ্কার বারবার প্রমাণ করে দিচ্ছে সেটাই।
করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য আইআইটি গুয়াহাটিকে রোবট বানাতে দেখা গিয়েছিল। পুনে রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্ট বানিয়েছিল অবিশ্বাস্য কম দামে টেস্টকিট। এবার আইআইটি রুরকি এবং হায়দ্রাবাদও সামিল হল যুদ্ধে।
ভেন্টিলেটর। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য অপরিহার্য একটি যন্ত্র। মূলত শ্বাস কষ্ট প্রধান লক্ষণ এই রোগের। তাই কৃত্রিমভাবে শ্বাসকার্য চালিয়ে রাখার জন্যই দরকার ভেন্টিলেটর। কিন্তু যেভাবে দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস, তত সংখ্যক ভেন্টিলেটর ব্যবস্থা করা প্রায় অসম্ভব। সঙ্গে এই ব্যবস্থা বেশ খরচসাপেক্ষও। সমাধান বের করল আইআইটি রুরকি এবং হায়দ্রাবাদ।
রুরকিতে তৈরি করা বহনীয় এই ভেন্টিলেটরের নাম ‘প্রাণ-বায়ু’। এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিল এআইআইএমএ-ও। গবেষণার কাজ শুরু হয়েছিল লকডাউনের পরে। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই অবাক করে তাঁরা তৈরি করে ফেলেন এই ভেন্টিলেটর। রুরকির প্রফেসর ডঃ অক্ষয় ভিভেদী জানান, এই ভেন্টিলেটর খুব কম খরচে বানানো যাবে। মাত্র ২৫ হাজার টাকায়। বাণিজ্যিকভাবে তৈরিতে সময়ও লাগবে না বেশি। এই বিষয় নিয়ে তাঁদের ইতিমধ্যেই ৪৫০-এর বেশি সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে। সুতরাং, এই পরিস্থিতিতে সহজেই ব্যবহার করা যাবে ‘প্রাণ-বায়ু’কে। দেড় ফুট বাই দেড় ফুটের এই ভেন্টিলেটর বয়ে নিয়ে যাওয়াও যাবে।
পাশাপাশি আইআইটি হায়দ্রাবাদ-ও ভেন্টিলেটর বানাল। তবে অন্য পদ্ধতিতে। ‘বিগ-ভাল্ভ-মাস্ক’ টেকনোলজিতে তৈরি এই ভেন্টিলেটরের নাম ‘জীবন-লাইট’। এটিও আকারে ছোটো এবং পোর্টেবল। কিন্তু সব থেকে চমকপ্রদ ব্যাপার হল, এটি যেকোনো বৈদ্যুতিক সরবরাহেই কাজ করতে পারবে। মানে গাড়ির ব্যাটারি অথবা অপ্রচলিত শক্তির সাহায্যেও কাজ করতে পারবে সহজেই। ব্যবহার করা যেতে পারে গ্রামে বা সেই সমস্ত জায়গায় যেখানে হাসপাতাল অনেক দূরে। মাত্র ৫ হাজার টাকা বা তার কম খরচেই বানানো যেতে পারে এই যন্ত্র। এই যন্ত্র বাণিজ্যিকভাবে কত দ্রুত আনা সম্ভব তার ওপরেই কাজ চলছে। এমন কথা জানিয়েছেন হায়দ্রাবাদের ডিরেক্টর প্রফেসর বি.এস. মূর্তি।
অন্যদিকে আইআইটি বোম্বে-র ছাত্র এবং প্রাক্তনীরা গবেষণা করে বার করেছেন নতুন একটি ট্র্যাকার অ্যাপ। করোনটাইন (Corontine)। করোনা আক্রান্ত অথবা সম্ভাব্য আক্রান্ত, যাঁদের বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হচ্ছে তাঁরা অনেকেই পালন করছে না সেই নির্দেশ। এবার তাঁদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে পারবে এই অ্যাপ। আদেশ অমান্য করলে সরাসরি পুলিশের কাছে যাবে এসএমএস। গোষ্ঠী সংক্রমণ রোখার জন্য এক অভূতপূর্ব আবিষ্কার এটিও।
জরুরি ব্যবস্থার পাশাপাশি ভারতের নানান জাতীয় শিক্ষাসংস্থার অবদান অনস্বীকার্য। যা অবিরাম লড়ে যাওয়ার ইন্ধন যুগিয়ে যাচ্ছে দেশকে। ভরসা দিচ্ছে চিকিৎসকদের। অথবা নিরলস পরিশ্রম করা পুলিশকর্মীদের। কাঁধে কাঁধ রেখে এভাবেই লড়তে পারলে কেটে যাবে দুঃসময়…