দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড়ো সাহিত্য পুরস্কারের তালিকায় বাংলার মনোরঞ্জন ব্যাপারী

মনোরঞ্জন ব্যাপারী। বাংলা সাহিত্যের সিরিয়াস পাঠকদের অনেকেই তাঁর লেখার সঙ্গে কমবেশি পরিচিত। অনেকে জানেন তাঁর জীবনসংগ্রামের ব্যাপারেও। দেশভাগের কয়েক বছর পর, উদ্বাস্তু হিসেবে পরিবারের সঙ্গে ভারতে আসেন ৩ বছরের মনোরঞ্জন। কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন যায়গায়, উদ্বাস্তু শিবিরে। জীবিকার প্রয়োজনে মালবাহক, রিকশাচালক, মজুরের কাজও করেছেন এই সাহিত্যিক। পরবর্তীকালে, দীর্ঘদিন একটি সরকারি স্কুলের রান্নার দায়িত্বে ছিলেন।

অজস্র প্রতিকূলতার পরেও লেখালিখি থামাননি মনোরঞ্জন। মূলত গদ্যসাহিত্যের এই রূপকার লিখেছেন অসংখ্য গল্প, বেশ কিছু উপন্যাসও। তাঁর ‘ইতিবৃত্তে চণ্ডালজীবন’ বইটির জন্য ২০১৪ সালে বাংলা আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এছাড়াও পেয়েছেন জাতীয় স্তরের বিভিন্ন পুরস্কার।

তাঁর তথা বাংলা সাহিত্যের পক্ষে গৌরবের আরেকটি খবর প্রকাশ্যে এল। সম্প্রতি, মনোরঞ্জন ব্যাপারীর 'বাতাসে বারুদের গন্ধ' উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ 'দেয়ার্স গান পাউডার ইন্ দি এয়ার' ২০১৯ সালের ডিএসসি প্রাইজের লং লিস্টে স্থান পেয়েছে। এটি অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক অরুণাভ সিংহ। পাঁচ সদস্যের আন্তর্জাতিক জুরির প্রধান দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক সম্প্রতি এই লং লিস্ট ঘোষণা করেন। প্রসঙ্গত, এটি দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্যের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পুরস্কার। ২০১১ থেকে এই পুরস্কার প্রদান শুরু হয়।

এছাড়াও লং লিস্টে মনোনীত হয়েছে ফতিমা ভুট্টোর 'দি রানাওয়েজ', অমিতাভ বাগচির 'হাফ দ্য নাইট ইজ গন', অকিল কুমারস্বামির 'হাফ গডস', মির্জা ওয়াহিদের 'টেল হার এভরিথিং' প্রভৃতি বই। আগামী ১৬ই ডিসেম্বর পোখরায় নেপাল সাহিত্য উৎসবে বিজেতার নাম ঘোষিত হবে। এই পুরস্কারের প্রাক্তন বিজেতাদের মধ্যে রয়েছেন ঝুম্পা লাহিড়ি, জিত থায়িল, অনুরাধা রায় প্রমুখ।

যাবতীয় জীবনসংগ্রামের পরও একের পর এক সমৃদ্ধ লেখা উপহার দেওয়ার জন্য বাঙালি পাঠক এমনিতেই মনোরঞ্জন ব্যাপারীর কাছে কৃতজ্ঞ। লং লিস্টে তাঁর এই মনোনয়ন বাঙালি হিসেবে আমাদের যে আরও গর্বিত করল, তা বলাই বাহুল্য।