ইরান-আমেরিকা সম্পর্ক তলানিতে, আবার উপসাগরীয় যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে মধ্য প্রাচ্য?

যেখানেই যেতেন, হাতে পরা থাকত একটি আংটি, লাল পাথর বসানো। মার্কিন ড্রোন হামলায় ঝলসে যাওয়ার পর সেই আংটিই তাঁকে চিনিয়ে দিয়েছিল। শুধু ইরান বা আমেরিকা নয়, গোটা বিশ্ব জেনে গিয়েছিল, মার্কিন এয়ারস্ট্রাইকে নিহত হয়েছেন ইরানের শীর্ষ সেনাকর্তা ও ‘সেকেন্ড পাওয়ারফুল ম্যান’ কাসেম সোলেমানি।

ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ড কোরের কুদস বাহিনীর কম্যান্ডার জেনারেল ছিলেন সোলেমানি। কিন্তু সেটা খাতায়-কলমে। আদতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের পরেই ছিল তাঁর স্থান। গোটা ইরান তো বটেই, মধ্য প্রাচ্যের নানা জায়গায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন এই মানুষটি। সেই মানুষটি নিহত হওয়ায়, আবারও ইরান, ইরাক-সহ মধ্য প্রাচ্যের পরিস্থিতি নতুন করে জটিল হয়ে উঠেছে। আর এর জন্য তাঁরা দায়ী করছেন আমেরিকাকেই।

ইসলামিক স্টেট বা আইসিসের সঙ্গে লড়াইয়ের সময় এই সোলেমানি এবং তাঁর বাহিনীই ট্রাম্পের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল। পরে আমেরিকা ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর সেই ‘সুসম্পর্কের’ অবনতি হতে থাকে। কাসেম সোলেমানিকে ‘জঙ্গি’ বলে ঘোষণা করে হোয়াইট হাউজ। তারপর, গত বছরের শেষের দিকে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে বিক্ষোভ সমস্ত কিছুকে বদলে দেয়। যার ইঙ্গিত এল নতুন বছরের শুরুতেই। বাগদাদ বিমানবন্দরে মার্কিন ড্রোনের হানায় নিহত হলেন সোলেমানি।

গোটা বিশ্ব আবার নতুন করে যুদ্ধের সম্ভাবনা জাগছে। ইতিমধ্যেই আয়াতোল্লা খামেনেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্পকে। এর চরম জবাব পাবে আমেরিকা, বলছেন তিনি। শুধু তিনি নয়, প্রিয় নেতাকে হারিয়ে ইরানের অধিকাংশ মানুষেরই একই বক্তব্য। ইরানের বিদেশমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি প্রত্যেকের গলায় একই সুর। কিন্তু আমেরিকা, বলা ভাল ট্রাম্প নিজের অবস্থানে অনড়। তিনি নাকি অশান্তি থামাতে এবং জঙ্গিদের রুখতেই এই হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সত্যিই কি তাই? প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতিনধ্যেই মধ্য প্রাচ্যে নতুন করে মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আরও একবার হামলা চালানো হয়েছে সেখানে। সব মিলিয়ে, দশকের শুরুতে নতুন করে যুদ্ধের মুখোমুখি হতে চলেছি আমরা? সে-আশঙ্কাই এখন করছেন সাধারণ মানুষ থেকে রাজনৈতিক আলোচকরা।

মধ্য প্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বের অর্থনীতি আরও বিপদের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরাও। প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। অপরিশোধিত তেলের দাম হু হু করে বাড়ছে। ভারতেও তার ছাপ পড়েছে। শুধু টেল নয়, দাম বেড়েছে সোনারও। এখন আবার নতুন করে কী পরিস্থিতি তৈরি হয়, ইরান কী পদক্ষেপ নেয়, তার দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।

ছবি ঋণ - www.sueddeutsche.de