স্কুলে রচনা লেখার সময় প্রায় সবাই ভারতের অন্যতম পরিচয় হিসেবে লিখেছি ‘নদীমাতৃক দেশ’। বাস্তবিকই, সারা ভারত তো বটেই, এই বাংলাতেও ছড়িয়ে আছে অনেক নদী— যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের সভ্যতা, ধর্ম। কিন্তু একটু চারিদিকে তাকালে কি সেই মনোরম ছবিটি কি দেখতে পাব? খুব সম্প্রতি বাঁকুড়ার দ্বারকেশ্বর নদ বাঁচানোর ঘটনা সেই প্রশ্নটিকেই সামনে নিয়ে এল।
ল্যাটেরাইট মাটির বাঁকুড়ার ওপর দিয়ে যে কটি নদী গেছে, দ্বারকেশ্বর তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান। বাঁকুড়ার বেশ কিছু পৌরসভা অঞ্চলে পানীয় জলের অন্যতম ভরসা এই নদ। একটা সময় তার বিস্তৃতি থাকলেও, আজ আর ততটা নেই। সেই নদীর চরেই আয়োজন করা হচ্ছে একটি বিশেষ আশ্রমের মহোৎসব। ইতিমধ্যেই চলছে প্যান্ডেল বাঁধার কাজ, সভামঞ্চের প্রস্তুতি। মোরাম ফেলে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী রাস্তাও। আর তা নিয়েই বিক্ষোভ জানিয়েছে ১৮টি পরিবেশ সংগঠন। প্রতিবাদকারীদের কথায়, “আমরা কোনভাবেই কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু এইভাবে দ্বারকেশ্বর নদের চরে বিশাল কাঠামো তৈরি করে অনুষ্ঠান করলে পরিবেশের অনেক ক্ষতি হবে। ক্ষতি হবে নদীটিরও। তাই এই অনুষ্ঠান বন্ধের দাবি জানাচ্ছি আমরা।”
এখন দ্বারকেশ্বর নদ প্রায় অনেক সময়ই অন্তঃসলিলা থাকে। ফলে এই সমাগমের ফলে তার সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা করছেন আন্দোলনকারীরা। এতে প্রশাসনের ভূমিকা ঠিক কী? শোনা যাচ্ছে, বিশেষ কিছু শর্তসাপেক্ষে এখানে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দিয়েছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন ও সেচ দফতর। শর্ত মূলত দুটি— প্রথমত, নদের বুকে কোনরকম স্থায়ী কাঠামো গড়া চলবে না। আর দ্বিতীয়ত, নদের গতিপথ যাতে বদল না হয়। এর ভিত্তিতেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উক্ত আশ্রমের ১২ জানুয়ারির উৎসবের জন্য যেভাবে একাধিক জায়গায় বাঁশের কাঠামো বানিয়ে, মোরাম ফেলে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি করা হচ্ছে, তাতে শঙ্কায় ভুগছেন পরিবেশকর্মীরা। সেইসঙ্গে থাকছে বিপুল জনসমাগমও। এই সমস্ত কিছু উল্লেখ করে, দ্বারকেশ্বর নদকে রক্ষা ও সংরক্ষণ করার জন্য তাঁরা স্মারকলিপি জমা দেন প্রশাসনের কাছে।
অবশ্য দ্বারকেশ্বরে এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও এর চরে মঞ্চ বেঁধে রাজনৈতিক সভা করেছেন তাবড় নেতা-মন্ত্রীরা। এবার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন এই আশ্রম। আর কতদিন এভাবে পরিবেশ অবমাননা হবে, সেই প্রশ্ন আমাদের সবার।