মাসে আয় লক্ষাধিক, পিছিয়ে নেই বাঙালি ইউটিউবাররাও

‘কে চায় বিখ্যাত হতে, তার চেয়ে বরং গানবাজনা হোক।’ কিন্তু গানবাজনা করেই তো কত মানুষ পৃথিবী বিখ্যাত হয়েছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে পৃথিবীতে বিখ্যাত মানুষের অভাব নেই। অথচ যুগ পাল্টেছে, পাল্টেছে বিখ্যাত হয়ে ওঠার গল্পগুলো।

নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে মানুষের কাছে এখন খুব সহজেই পৌঁছানো যায়। ধরা যাক, পাশের বাড়ির ছেলেটি বা মেয়েটি আপনার পাশ দিয়ে রোজ হেঁটে চলে যায়। আপনি হয়ত ঘুরেও তাকান না তার দিকে। অথচ এই ছেলেটি বা মেয়েটি কয়েক কোটি মানুষের কাছে পরিচিত। এরা ‘ইউটিউব সেলিব্রিটি’।

টেকনোলজিকে ব্যবহার করেও যে বিখ্যাত হওয়া যায় তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ এই ইউটিউবাররা। সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে কয়েক কোটি লোক প্রতিদিন ইউটিউব দেখেন। রীতিমতো ফলো বা সাবস্ক্রাইব করে রাখেন তাদের প্রিয় ইউটিউবারদের চ্যানেল।

পিছিয়ে নেই বাঙালিরাও। কাজল সরকার হলেন বাংলার একজন বিখ্যাত ইউটিউবার, যাঁর চ্যানেলে এই মুহূর্তে দর্শক প্রায় দশ লক্ষ ছুঁইছুঁই। মা-ঠাকুমার রান্নার কীর্তি দেখে নেহাত শখেই ভিডিও করতে শুরু করেছিলেন কাজল। আর তারপরেই কেল্লাফতে। নিজের ভাবনার সাথে টেকনোলজিকে মিলিয়ে দিলেন তিনি। রান্না ভালোবাসেন অনেকেই, তাঁদের কথা ভেবেই 'ভিলফুড' নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেন।

সাধারণত, ইউটিউবে একটি নির্দিষ্ট ভিউয়ার হওয়ার পর থেকে চ্যানেলটি কোম্পানি থেকে টাকা পেতে শুরু করে। বর্তমানে কাজল ও তাঁর টিম মাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় করেন বলে শোনা গেছে।
বাংলার সংস্কৃতি বরাবর বিশ্বের দরবারে সমাদৃত হয়েছে। কিন্তু আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে যে ইউটিউব থেকেও টাকা অর্জন করা যায় তা বোধহয় ভাবতে পারিনি অনেকে-ই। কিন্তু বেশ কয়েক বছর হল ‘দ্য বং গাই’ খ্যাত কিরণ দত্ত, 'ওয়ান্ডার মুন্না' চ্যানেলের ইন্দ্রাণী বিশ্বাস, 'দ্য ইন্ডিয়ান গার্ডেনার' খ্যাত নীলকান্ত হালদার নিজেদের ইউটিউব চ্যানেলটি থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা উপার্জন করা শুরু করেছেন।

অথচ যাত্রাপথে ছিল বহু বাধা। আর পাঁচজনের মতো, তাঁদেরও লক্ষ্য ছিল পড়াশোনা করে চাকরি করা। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ ইঞ্জিনিয়ার। ক্যাম্পাসিং-এ ইন্টারভিউ দিয়ে সুযোগ না পাওয়ার পরও থেমে থাকেননি তাঁরা। নিজেদের ইচ্ছাতেই বিভিন্ন রকমের ভিডিও করে আপলোড করতে শুরু করেন ইউটিউবে। ক্রমশ বাড়ে ভিউয়ারশিপ, পরিণত হবার পাশাপাশি চ্যানেলগুলিও ক্রমশ জনমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

দুর্গাপুরের নীলকান্ত হালদার গাছের পরিচর্যার ভিডিও আপলোড করতে শুরু করেন। আর তারপর থেকেই বাড়তে থাকে তার অনুরাগীদের সংখ্যা। ইউটিউবে কেউ মানুষকে হাসিয়ে, কেউ রান্নার পদ্ধতি শিখিয়ে মানুষকে আনন্দ দিতে ভালোবাসেন। এঁদের বিষয় অনেকক্ষেত্রে এক হলেও কন্টেন্ট সম্পূর্ণ নিজস্ব।

অনেকেই মনে করছেন, বাঙালি ইউটিউবাররা ক্রমশ নিজেদেরকে জনপ্রিয় করে তুলছেন। কিরণের বর্তমানে ইউটিউব চ্যানেলটি দেখেন প্রায় ১৭ লক্ষ লোক। শুধুমাত্র ভারতে নয়, এঁদের চ্যানেলগুলি বাংলাদেশেও সমান ভাবে জনপ্রিয়। ভবিষ্যৎ যে অন্যরকম ভাবেও নির্ধারণ করা যেতে পারে, টেকনোলজির সদ্ব্যবহারে যে পাল্টে যায় আয়ের উৎস তারই নতুন দিশা দেখাচ্ছেন এই বাঙালি ইউটিউবাররা।