দেবীপক্ষ শেষ তো কী হয়েছে! উৎসবের রেশ থেকে এখনও বেরোতে পারেনি কলকাতা। পারবেই বা কী করে! ঢাকের বোল কানে এলে, বাঙালির মন স্থির থাকা প্রায় অসম্ভব। আর মরসুম এমনই, দুর্গাপুজো ফুরোলেও রেখে যায় উত্তরাধিকার। তাই তো লক্ষ্মীপুজো পেরিয়ে কালীপুজো-ভাইফোঁটা হয়ে থামে বাঙালির উৎসব। আর সেই পরম্পরাতেই ইন্ধন জুগিয়ে চলেন ঢাকিরা। চলেছেন।
আজ, শনিবার। পঞ্জিকামতে, ভূত চতুর্দশী। আগামীকাল অমাবস্যা, অর্থাৎ কালীপূজা। উৎসবের দিনে রোজগারের আশায়, বিভিন্ন জেলা থেকে কলকাতায় এসে হাজির হয়েছেন ঢাকিরাও। শুক্রবার সন্ধে থেকেই তাঁদের ভিড় জমতে শুরু করেছিল শিয়ালদহ স্টেশনের বাইরে। শনিবার সকালেও তা কমেনি। প্রতিবছর, দুর্গাপূজার আগে শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে ঢাকিদের জমায়েত একটি পরিচিত দৃশ্য। কিন্তু কালীপূজার সময় তাঁরা মানুষের মনযোগ পান না অতটা। অথচ শহরের বিভিন্ন কোণে তো বটেই, জেলাতেও ধুমধাম করে পালিত হয় কালীপূজা। শক্তির আরাধনা হবে, আর ঢাক বাজবে না, তা আবার হয় নাকি!
সে-কারণেই শুক্রবার সন্ধ্যা হতে না হতেই চলে এসেছেন। একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজিয়ে যাচ্ছেন ঢাক। অফুরন্ত প্রাণশক্তি তাঁদের। কেউ ক্লান্ত হয়ে ঢাক নামিয়ে রাখলে, অন্যজন তুলে নিচ্ছেন সেই ভার। ঢাকের শব্দে আলোড়িত হচ্ছে শিয়ালদহ। সঙ্গে ক্ষীণ স্বরে শোনা যায় কাঁসরও। কিন্তু কেন ক্লান্তিহীন ঢাক বাজিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা?
কারণ একটাই। কোনো পুজো কমিটির পক্ষ থেকে, কেউ যদি বায়না করে নিয়ে যায়। প্রত্যেক বছরই পুজোর আগে এখানে ভিড় জমান ঢাকিরা। বাজনা শুনে, দরদাম করে এখান থেকেই তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় মণ্ডপে। সে-নিয়মের ব্যতিক্রম হবে না এবারও। হবে না তো?
সংশয় তাঁদের গলায়। এমনিতেই আবহাওয়ার কারণে কাল থেকে খুব একটা আশার আলো দেখেননি কানাই মণ্ডল, সুবল দাস-রা। কাজ না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে হলে, মুশকিল হবে সংসার চালানো। কেননা কালীপুজো পেরিয়ে গেলে ঢাকেরও ছুটি। আবার দীর্ঘ-দীর্ঘ দিন পর কাঠির ছোঁয়া পাবে তারা।
শনিবারের সকাল তাই অপেক্ষায় আছে। বেলা বাড়লে, নিশ্চয়ই বায়না পাবেন ঢাকিরা! সেই প্রার্থনাই তাঁদের গলায়। কেউ যেন ফিরে না যায়। দূর-দূরান্ত থেকে এসে খোলা আকাশের নিচে সারারাত কাটানো তাহলে বৃথা যাবে।
অপেক্ষা সূর্য ওঠারও...