কাঁচামালের অভাব বেঙ্গল কেমিক্যালসে, ম্যালেরিয়ার ওষুধ তৈরি সংকটে

ঋতু পরিবর্তনের সময় ভাইরাসজনিত জ্বরের কবলে তো অনেকেই পড়েন। সেইসঙ্গে সর্দি-কাশি। এইসব ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে ক্লোরকুইন এবং অ্যাজিথ্রোমাইসিন যথেষ্ট কার্যকর ওষুধ। ডাক্তাররা তো বটেই, সাধারণ মানুষও এই দুই ওষুধের কার্যকারিতা জানেন। তবে শুধু ম্যালেরিয়া বা সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বর নয়, করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করতেও যে এই দুই ওষুধ যথেষ্ট কার্যকর, সেকথা কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষজ্ঞ সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে। আর তাতেই বিপাকে পড়েছেন বহু ওষুধ নির্মাতা সংস্থা। বাজারে চাহিদা বেড়েছে রাতারাতি, কিন্তু কাঁচামালের যথেষ্ট জোগান নেই। সমস্যা তৈরি হয়েছে প্যারাসিটামল বর্গের ওষুধ তৈরি নিয়েও।

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে সরকারি ওষুধ নির্মাতা সংস্থা বেঙ্গল কেমিক্যালস। বাজারের চাহিদা মতো ওষুধের জোগান দিতে না পারার কথা জানিয়েছেন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর পিএম চন্দ্রাইয়া। দেখা যাচ্ছে কাঁচামাল সরবরাহ করেন যেসব ডিলার, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তাঁরা রাতারাতি দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রায় পাঁচগুণ পর্যন্ত বেশি দাম হাঁকছেন অনেকে। এদিকে কোনো সরকারি সংস্থার তরফ থেকে এতো বেশি দামে কাঁচামাল কেনা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন চন্দ্রাইয়া।

এদিকে উৎপাদনকারী সংস্থার তরফ থেকেও জানানো হয়েছে, বাজারে চাহিদা এতটাই বেশি যে জুন-জুলাইয়ের আগে মাল সরবরাহ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া অ্যাজিথ্রোমাইসিন এবং প্যারাসিটামল গোত্রের ওষুধের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল আসত চিন থেকে। করোনা ভাইরাসের কেন্দ্র চিন। ফলে সেদেশের সঙ্গে ব্যবসার সুযোগও কমেছে। এই পরিস্থিতিতে বড়োজোর আগামী মাস পর্যন্ত জোগান ঠিক রাখা যাবে বলে জানিয়েছেন চন্দ্রাইয়া।

১৯০১ সালে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের হাত ধরে তৈরি হয়েছিল বেঙ্গল কেমিক্যালস অ্যান্ড ফার্মাকিউটিক্যালস কোম্পানি। এদেশে স্বদেশি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রথম ওষুধ নির্মাতা সংস্থা এটি। স্বাধীনতার পর এটি সরকারি পর্যবেক্ষণের মধ্যেই আছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক দুরাবস্থায় ধুঁকছিল এই সংস্থা। কিছুদিন আগে প্রতিষ্ঠান বিক্রি হয়ে যাওয়ার সম্ভবনাও দেখা দেয়। অবশ্য টালমাটাল পরিস্থিতির শেষে গত তিন বছর খানিকটা লাভের মুখ দেখেছিল ঐতিহ্যশালী এই প্রতিষ্ঠানটি। করোনা ভাইরাসের আক্রমণে কি আবার বড়োসড়ো ক্ষতির মুখে পড়বে বেঙ্গল কেমিক্যালস? নানা স্তরে চলছে জল্পনা। চাহিদা বাড়লে অবশ্য অন্য ওষুধের উৎপাদন কমিয়ে ব্যবস্থা করা যায়, কিন্তু কাঁচামালের জোগান না থাকলে উৎপাদন চলবে কীভাবে? পিএম চন্দ্রাইয়ার কথায় তাই উদ্বেগের সুর স্পষ্ট। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের তরফ থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেদিকেই তাকিয়ে সবাই।