একসময় সেখানে ছিল অসংখ্য কয়লার খনি। পাহাড়েথেকে চূড়া উড়িয়ে দেওয়া হত ডিনামাইটের বিস্ফোরণে। ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছিল সবুজ। আর আজ সেখানেই জন্ম নিয়েছে এক গভীর বনভূমি। অন্তত ১৮৭ মিলিয়ন গাছের সমারোহ। আর সেই বনভূমিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি বিরল বাস্তুতন্ত্র। এমনই গল্প অ্যাপালেসিয়ান পর্বতের। এই গল্প আসলে একটি মানুষের। একদিন কয়লাখনির সন্ধনকারী হিসাবে যিনি কাজ শুরু করেছিলেন। তারপর হয়ে উঠলেন মেষপালক। তাঁর হাত ধরেই নতুন করে সবুজের ছোঁয়া পেল গোটা পার্বত্য অঞ্চল। সেই ব্যতিক্রমী মানুষটির নাম প্যাট্রিক অ্যাঞ্জেল।
গত শতাব্দীর শেষদিকে একজন কোলম্যান হয়ে জীবিকা শুরু করেন প্যাট্রিক। তাঁর নিজের একটি এজেন্সি ছিল। নাম অফিস অফ সারফেস মাইনিং বা সংক্ষেপে ওএসএম। কয়লা খননের কাজে যে এই সংস্থার খুব একটা সুনাম ছিল এমন নয়। তবে বেশ কয়েক দল কর্মচারীকে নিয়ে কাজ চলে যেত। কিন্তু প্যাট্রিক ভাবতেন, তাঁর প্রযুক্তিতে কি কোথাও খামতি থেকে যাচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চাইলেন তিনি নিজে। আর তাই কেন্টাকি ইউনিভার্সিটিতে গেলেন পিএইচডি করতে।
আর সেই সূত্রেই বদলে গেল তাঁর জীবন। ইউনিভার্সিটিতে আলাপ হল এক পরিবেশবিদের সঙ্গে। তাঁর নাম ক্রিস বার্টন। বনভূমি কীভাবে বন্যা রোধ করে, এই ছিল তাঁর গবেষণার বিষয়। বার্টনের কথা শুনেই প্যাট্রিক বুঝতে পারলেন, ক্রমাগত বৃক্ষছেদন প্রকৃতির কী অপূরণীয় ক্ষতি করছে। তবে বার্টন বলতেন, এর নিরাময় সম্ভব। পরিত্যক্ত কয়লাখনিতেই আবার বনসৃজন করা যায়। আর এই কথা শুনেই আনন্দিত হয়ে ওঠেন প্যাট্রিক। দুজনে ফিরে এলেন এজেন্সিতে। কাজ শুরু হলো নতুন করে। আর বনভূমি ধ্বংস করা নয়, এবার নতুন করে বনসৃজন।
প্যাট্রিকের এই মতিভ্রম মেনে নিতে পারেননি অনেক কর্মচারী। তাঁরা কাজে ইস্তফা দিয়ে চলে গিয়েছেন। আর যাবেন নাই বা কেন! নিশ্চিত উপার্জনের পরিবর্তে বোনের মোষ তাড়াতে আর কজনই বা এগিয়ে আসবে? তবে এগিয়ে এসেছিলেন কেন্টাকির সাধারণ মানুষ। তাঁরা বনভূমির প্রয়োজন বুঝেছিলেন। আর এভাবেই সবাই মিলে গাছ লাগানোর কাজ শুরু হল। ভার্জিনিয়া, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া আর পেনসিলভানিয়ার পরিত্যক্ত খনিতে জন্ম নিল অসংখ্য উদ্ভিদ। সেই ২০০৪ থেকে এখনও চলছে এই কাজ। অন্তত ১৮৭ মিলিয়ন গাছের ঘন বন গড়ে উঠেছে ২ লক্ষ ৭০ হাজার একর জমিতে। সেখানে আছে অন্তত ১ লক্ষ প্রজাতির গাছ।
পরিবেশ বাঁচাতে গাছ লাগানোর কথা তো অনেকেই বলেন। কিন্তু প্যাট্রিকের মতো কজনই বা এগিয়ে আসেন? এঁরাই তো জন্ম দিচ্ছেন আগামীর সম্ভবনার। হয়তো এভাবেই অকালে ধ্বংস হওয়ার থেকে বেঁচে যাবে আমাদের সভ্যতা।