এপ্রিলে একটাও মোটরগাড়ি বিক্রি হয়নি ভারতে, সংকটে অটোমোবাইল শিল্প

করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লকডাউন ছাড়া আর কোনো কৌশল কারোর জানা নেই এই মুহূর্তে। তাই বাধ্য হয়েই, লকডাউনের মেয়াদ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করতে হচ্ছে সরকারকে। লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণের সংখ্যা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পাশাপাশি এই মহামারী ভয়ঙ্করভাবে আঘাত হেনেছে ভারতের অর্থনীতিতেও। অন্ধকার নেমে এসেছে মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পে।

ভারতের ইতিহাসে এই প্রথমবার। গোটা এপ্রিল মাসে কোনো কোম্পানির তৈরি কোনো গাড়িই বিক্রি হয়নি। বলাই বাহুল্য, ভয়ঙ্কর ক্ষতির মুখে যানবাহন নির্মাণ শিল্প। লকডাউনের কারণে অর্থনৈতিক শৃঙ্খল ভেঙেছে দেশের। তাই বিক্রির হার শূন্যে এসে ঠেকেছে। পাশাপাশি প্রভাব পড়েছে কাঁচামালের সরবরাহেও। সেই কারণেই শিল্পগুলি বাধ্য হয়েছে উৎপাদন বন্ধ করতে। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই মহামারীতে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুনে, গুরগাঁও, চেন্নাইয়ের শিল্পাঞ্চলগুলি। খুব তাড়াতাড়ি লকডাউন ওঠার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তাই শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বেশ খানিকটা সময় লেগে যাবে এই মন্দা কাটিয়ে উঠতে। প্রধান যানবাহন নির্মাণ শিল্পগুলির সঙ্গে মার খাচ্ছে যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী ছোটো শিল্পগুলিও। তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা এবং উত্তরপ্রদেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান ছিল এই শিল্পগুলির। এই ছোটো শিল্পগুলির উৎপাদন শুরু না হলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবে না বড়ো কোম্পানিগুলিও। ফলে রাজ্যগুলি, চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়বে। এমনটাই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

অর্থনীতি সচল করতে ইতিমধ্যেই সরকার ছাড়পত্র দিয়েছে যানবাহন নির্মাণ শিল্পগুলিকে। অনুমতি দেওয়া হয়েছে অসংক্রমিত অঞ্চলগুলিতে কারখানা খোলার। কিন্তু বিক্রির গ্রাফ নিম্নমুখী হওয়ায়, অধিকাংশ কারখানাই অনিচ্ছুক উৎপাদন শুরু করতে। বিক্রি না হওয়ায় ভর্তি হয়ে রয়েছে গুদামগুলি। স্বাভাবিক সময়ে ৬-৭ দিনে বিক্রি হত যে সংখ্যক মোটরগাড়ি। লকডাউনের পরে বিক্রি হয়নি তার কিছুই। তাই লকডাউন উঠলে যতক্ষণ না প্রস্তুত গাড়িগুলি বিক্রি হচ্ছে সম্পূর্ণ ভাবে, শুরু হবে না উৎপাদন।

মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রায় ৪ কোটি মানুষের জীবিকা। এই দুর্যোগে উপার্জন হারিয়েছন তাঁরাও। দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় অবদান থাকে এই শিল্পের। মোট জিডিপি-র ৮ শতাংশ আসে এখান থেকেই। দেশের মোট আয়করের ১৫ শতাংশের মতো যোগ করে মোটর শিল্প। ফলে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে দেশের অর্থনীতিও। তাছাড়া লকডাউন উঠলে কর্মী ছাঁটাইয়ে উপার্জনহীন হবেন বেশ কিছু মানুষ।

তবে বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে দেখলে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, পুরোনো ছন্দে ফিরতে বেশ সময় লাগবে শিল্পগুলির। সময় লাগবে ভারতের অর্থনীতি মসৃণ হতেও।