বয়স মাত্র ২০, ব্রিটিশ ভারতে জাহাজের ব্যবসা শুরু করলেন এই মহিলা শিল্পপতি

মাত্র ২০ বছর বয়স ছিল মেয়েটির। ততদিনে বিয়েও হয়ে গেছে। কিন্তু, থেমে থাকতে যে শেখেননি তিনি। যুক্ত হলেন ব্যবসায়। যে সে ব্যবসা নয়, জাহাজের ব্যবসা। বিংশ শতকের সেই সময়, এমন চমকপ্রদ ঘটনা ভারত দেখেনি। কিন্তু, সবকিছু মুছে, সেটা সম্ভব করলেন তিনি। তিনি, সুমতি মোরারজি।

১৯০৯ সালের মুম্বইয়ের একটি বণিক পরিবারে জন্ম নেন সুমতি। অবশ্য, তখন তিনি এই নামে পরিচিত ছিলেন না। নাম ছিল যমুনা। বণিক পরিবার হলেও, কঠোর নিয়মকানুনের মধ্যে বড়ো হচ্ছিলেন তিনি। সেই সময়, যেটা বহু ভারতীয় মেয়েরই শৈশব ছিল। এমন সময়, চোখে পলক পড়তে পড়তেই বিয়ে হয়ে গেল যমুনার। তখন বয়স মাত্র ১৩ বছর।

কিন্তু তখন আর কে জানত, এই বিয়েই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে! বিখ্যাত মোরারজি পরিবারের ছেলে শান্তিকুমার মোরারজির সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। নতুন নাম হয় ‘সুমতি’। বিয়ের পরেই কিশোরী সুমতির প্রতি মুগ্ধ হয়ে পড়েন স্বামী শান্তিকুমার এবং শ্বশুর নরোত্তম মোরারজি। না, ঘরকন্নায় নয়। বরং মুগ্ধ হন তাঁর বুদ্ধিমত্তায়। মুগ্ধ হন তাঁর অদম্য শেখার ইচ্ছায়। এখানে কোনও শাসনের মুখে পড়তে হয়নি যমুনা ওরফে সুমতিকে। নিজের চেষ্টায় শেখেন ইংরাজি। এমনকি, মোরারজি পরিবারের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের প্রতিও উৎসাহিত হন তিনি।

পুত্রবধূর এমন ভূমিকায়, রীতিমত উৎসাহিত হন নরোত্তম। জহুরির চোখ ঠিকই চিনে নিল ভবিষ্যতের হিরেকে। সেই সময় নতুন জাহাজের ব্যবসা শুরু করেছিলেন তাঁরা। নাম ‘স্কিন্ডিয়া স্টিম নেভিগেশন’। সুমতির অসাধারণ ব্যবসায়িক বুদ্ধি দেখে, সেই ব্যবসার সঙ্গে তাঁকে যুক্ত করেন তিনি। সুমতির বয়স তখন মাত্র ২০ বছর। হ্যাঁ, একটা কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উঠে যায় তাঁর নাম। তৈরি হয় একটা ইতিহাস।

ব্যবসা বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে। একজন যুবতী মেয়ের অসাধারণ ক্ষমতায় মুগ্ধ হন সকলে। মুগ্ধ হয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধীও। গান্ধীজির স্নেহভাজন ছিলেন সুমতি দেবী। পরবর্তীকালেও বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। কিন্তু ভারতের জাহাজ ব্যবসার ‘প্রথম নারী’ হিসেবে তাঁর নামটি অক্ষত হয়েই থাকবে। পেয়েছেন অনেক সম্মান। ১৯৭০ সালে লন্ডনে ওয়ার্ল্ড শিপিং ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। ভারত সরকারের তরফ থেকে পেয়েছেন পদ্মবিভূষণ সম্মান। ১৯৯৮ সালে তাঁর নিঃশ্বাস থেমে গেলেও, তাঁর কাজ থেমে যায়নি। তাঁর ব্যাটন এখন বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অন্যরা।

Latest News See More