হুগলির বাতায়নে একঝাঁক টাটকা বাতাস, সেই সঙ্গে মানবজমিনের মাটির গন্ধ

এ যেন এক সব পেয়েছির দেশ। কেউ কোনও চাপ দেয় না, বকে না, মারে না। নিজের মতো করে এখানে নিজেদের পথ খুঁজে নেয় শিশুরা। বড় হয়, ডালপালা মেলে। হুগলি জেলার খন্যানের ‘বাতায়ন’-এর হাওয়ায় দিশা পায় তারা। সম্প্রতি সেখানেই হয়ে গেল ‘মানবজমিন-২০২০’ উৎসব। বছর বদলালেও অনুষ্ঠানের লক্ষ্য বদলায়নি। বাতায়নের শিশুরা আজও মাটির গন্ধ খুঁজে নেয় এই উৎসব থেকে।

২০১৪ সাল থেকে শুরু হয়েছিল ‘বাতায়ন’-এর পথ চলা। শুরুতে সামর্থ্য সেরকম ছিল না, কিন্তু উদ্দেশ্যটা ছিল বড়ো। আশেপাশের গরিব, আদিবাসী বাচ্চাদের বিনা পয়সায় পড়ানো শুরু হয় এখানে। তবে শুধু সিলেবাসের পড়াশোনাই নয়, প্রকৃতিকে চিনতে, মাটিকে চিনতে, লোকশিল্পকে চিনতেও শেখানো হয় এখানে। সবকিছুই চলে স্বাধীনভাবে, কোনও চাপ না দিয়ে। আর সেই কর্মকাণ্ডেরই একটি অংশ ‘মানবজমিন’ অনুষ্ঠানটি। মাটির সঙ্গে বাচ্চাদের যোগসূত্র যাতে আরও নিবিড় হয়, তারই প্রচেষ্টায় থাকেন বাতায়নের শিক্ষক-কর্মীরা।

জানুয়ারির ৪ এবং ৫— এই দুইদিন ধরে চলেছিল অনুষ্ঠান। এই নিয়ে ষষ্ঠ বর্ষে পদার্পণ করল মানবজমিন। অবশ্য শুধু এই দুদিন নয়, বিগত দেড় মাস ধরে চলেছিল প্রস্তুতি পর্ব। গান-ফকির গান-লেটো-মঙ্গলকাব্য-নাচনী’র মতন হারিয়ে যেতে বসা সংস্কৃতির সঙ্গে ধীরে ধীরে পরিচিত হয় শিশুরা। গোটা অনুষ্ঠানেই মূল ফোকাস ছিল গান। আদিবাসী গান, পুরনো বাংলা গান, রবীন্দ্র সঙ্গীত— সমস্ত কিছুরই আয়োজন ছিল। বাতায়নের ছাত্রছাত্রীরাই নয়, বাইরে থেকেও বিভিন্ন গানের দল এবং নাটকের দল এসেছিল এই অনুষ্ঠানে। যেমন এসেছিল শান্তিপুরের সাজঘর। তাদের নাটক ‘জলবুড়োর গল্পকথা’র মূল বিষয় ছিল বর্তমান বিশ্বের নানা জায়গার জলসমস্যার কথা।

শুধু বাইরের শিল্পীরাই নন, বাতায়নের শিশুরাও নিজেদের মতো করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে এখানে। ‘মানবজমিন’-এর শেষদিন, ৫ তারিখ মূলত তাদেরই ওপর ছিল স্পটলাইট। সেইখানে তাদের নাটকে উঠে আসে অন্যায়ভাবে নদীতে বাঁধ দেওয়ার ঘটনা। এছাড়াও ছিল গৌতম দাস বাউলের লোকগীতি। বের করেছে নিজেদের পত্রিকাও। এইভাবেই নাচে-গানে-নাটকে বছরের শুরুর সময়টা কাটায় শিশুরা।

এখনও মানবজমিনের পুরো অনুষ্ঠানটা হয় সাধারণ মানুষের দেওয়া অর্থে। চাতাল থেকে আজ স্বপ্নের জাহাজবাড়িতে বাতায়ন। তাদের আকর কিন্তু সেই একই আছে। এই গরিব শিশুগুলিকে ডানা মেলার আকাশ দিতে চায় তারা। যেখানে কোনো বাধানিষেধ নেই, নিজের সুখে, নিজের আনন্দেই সেখানে উড়বে এরা। মানবজমিন তাই প্রকৃত অর্থে তাদের মাটিকে চেনার উৎসব, তাকে উদযাপন করার উৎসব।

More From Author See More

Latest News See More