রক্ত নেই ব্লাড ব্যাঙ্কে, নিজেই রক্ত দিয়ে বৃদ্ধাকে বাঁচালেন বৌবাজার থানার অতিরিক্ত ওসি

করোনার জেরে লকডাউন চলছে দেশে। পশ্চিমবঙ্গেও সর্বত্র থমকে আছে জীবন। এটাই এখন সবার কর্তব্য, জানাচ্ছেন ডাক্তাররা। কিন্তু শুধু তো করোনাতেই থেমে নেই অসুস্থতা। কারোর কঠিন অপারেশন, কারোর আবার রক্তের ঘাটতি। ব্লাড ব্যাঙ্কেও যেতে পারছেন না কেউ; রাস্তায় যে গাড়ি-ঘোড়া নেই! এমন অবস্থাতেই পুলিশের মানবিক রূপ দেখল শহর কলকাতা। মরণাপন্ন রোগীকে বাঁচাতে নিজে এগিয়ে এলেন পুলিশকর্তা; আগে মানুষটার প্রাণ বাঁচাতে হবে যে!

আরও পড়ুন
ভারতকে জিতিয়েছেন বিশ্বকাপ, করোনার বিরুদ্ধেও জয়ের খোঁজ যোগিন্দর শর্মা-র

ঘটনাটি ঘটেছে বৌবাজার এলাকায়। গতকাল, অর্থাৎ ২৯ তারিখ একটি ফোন আসে বৌবাজার পুলিশ স্টেশনে। ওপারে ছিলেন হালদার লেনের বাসিন্দা কণিকা মজুমদার। বয়স ৮০ পেরিয়েছে। অসহায় কণ্ঠে বলছিলেন, তাঁর ননদ, শ্রীমতী কৃষ্ণা গুপ্তের কথা। কৃষ্ণাদেবী গুরুতর অসুস্থ হয়ে নবজীবন হাসপাতালে ভর্তি। ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল শরীর থেকে। অসুস্থতা স্বাভাবিকভাবেই আরও বেড়ে গিয়েছিল। কৃষ্ণাদেবীর ব্লাডগ্রুপ ‘A+’। এদিকে হাসপাতালে ওই ব্লাডগ্রুপের রক্ত নেই। এমন অবস্থায় একপ্রকার বাধ্য হয়েই কণিকা মজুমদার ফোন করেছেন বৌবাজার থানায়। যদি কেউ সাহায্য করেন…

আরও পড়ুন
প্রসবের আগে পর্যন্ত কাজের মধ্যেই, জমা দিয়েছেন করোনার টেস্টকিট

খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে থানার একজন সার্জেন্ট, লেডি সিভিক পুলিশ এবং ওই বাড়ির পরিচারিকাকে নিয়ে চলে যান সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে। সঙ্গে ছিল ব্লাড ডোনারস কার্ডও। কিন্তু গিয়ে আবারও হতাশ! ওই মুহূর্তে A+ গ্রুপের কোনো রক্তই মজুত নেই ওখানে। মহা বিপদে পড়লেন সবাই। এদিকে রোগীর অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। তৎক্ষণাৎ রক্ত দেওয়া না হলে বড়ো বিপদ ঘটে যেতে পারে।

আরও পড়ুন
পশ্চিমবঙ্গে এবার করোনা-আক্রান্ত খোদ চিকিৎসক, সংখ্যা বাড়ছে ক্রমশই

এই পরিস্থিতিতেই এগিয়ে এলেন বৌবাজার থানার অ্যাডিশনাল ওসি সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁরও ব্লাড গ্রুপ A+। কোনো আশা নেই দেখে তিনি নিজেই রক্ত দেওয়ার জন্য এগিয়ে এলেন। শেষে তাঁর রক্তই সংগ্রহ করে রোগীকে দেওয়া হল। ডাক্তার, রোগীর আত্মীয় থেকে শুরু করে সবার স্বস্তির নিঃশ্বাস! শেষরক্ষা হল তবে।

আরও পড়ুন
করোনা-আক্রান্তের মৃত্যু হলে শেষকৃত্য ধাপায়, নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত প্রশাসনের

এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। করোনায় যখন গোটা ভারতের সঙ্গে এই রাজ্যও বিধ্বস্ত; তখন পুলিশের মানবিক চেহারাই নানা জায়গায় উঠে এল। কোথাও বয়স্ক, অসহায় মানুষদের ওষুধ খাবার কিনে দেওয়া, রাস্তার কুকুরদের খেতে দেওয়া; আবার রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া— সমস্ত জায়গায় এগিয়ে আসছেন আমাদের রক্ষাকর্তারা। অভিযোগও উঠেছে নানা জায়গায়। কিন্তু দিনের শেষে, সমস্ত খারাপ কিছুকে সরিয়ে এই ভালোটুকু নিয়ে একটু স্বপ্ন তো দেখাই যায়। পুলিশ, ডাক্তার, সংবাদমাধ্যমের কর্মী— তাঁদেরও তো জীবন আছে, তাঁদেরও পরিবার আছে। এই বিপদের মুহূর্তে এরা যদি কাজ না করেন, তাহলে তো গোটা ব্যবস্থাটাই ধসে যাবে। তাঁরাই এগিয়ে আসছেন আমাদের জন্য। যতটুকু পারা যায়, সাধ্যমতো সেটা চেষ্টা করছেন সবাই। আসুন, আমরাও চেষ্টা করি নিজের নিজের জায়গায়।