করোনা-আক্রান্তের মৃত্যু হলে শেষকৃত্য ধাপায়, নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত প্রশাসনের

মৃত্যুর সময় মুখে জল পাওয়া যাবে কিনা এই চিন্তায় একসময় তোলপাড় হতেন অনেকেই। পুরনো দিনের সিনেমা থেকে শুরু করে সাহিত্য- অনেক জায়গাতেই এর উল্লেখ পেয়েছি আমরা। ধরুন আপনার আত্মীয়স্বজন রয়েছে; আছে বন্ধুবান্ধব, সন্তানও। কিন্তু মৃত্যুর পর মুখাগ্নি করা তো দূর অস্ত, আপনাকে ছুঁয়ে দেখারও অনুমতি নেই তাঁদের। দূর থেকেই শেষ দেখতে হবে প্রিয়জনকে। হ্যাঁ, করোনা এমনই ভয়াল পরিস্থিতির সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আমাদের।

আরও পড়ুন
করোনাই শেষ নয়, আরও ভয়ংকর মহামারী আসতে চলেছে, আশঙ্কা পরিবেশবিদদের

কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মৃত প্রৌঢ়ের সৎকার নিয়ে উত্তাল হয়েছিল নিমতলা শ্মশান। ওখানকার বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে দাহ করতে গেলে এখান থেকে রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে এলাকায়। কিন্তু সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক এই কথা। পশ্চিমবঙ্গের চুল্লির ভেতরের উষ্ণতা থাকে কয়েকশো ডিগ্রি। আর করোনা ভাইরাস অত উষ্ণতায় বাঁচতে পারে না। তবু বিজ্ঞানের পরোয়া করেননি বাসিন্দারা। আতঙ্ক গ্রাস করে রেখেছিল তাঁদের। আর তারপরেই একটি নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাঁদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এরপর যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যান, তাঁকে অন্য কোনো শ্মশানে না; ধাপায় দাহ করা হবে! এছাড়া মুসলিম ধর্মাবলম্বীও যদি কেউ মারা যান, তবে তাঁকে ধাপার পাশে বাগমারি কবরস্থানে সমাধিস্থ দেওয়া হবে। রোগ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতেই এমন সিদ্ধান্ত।

আরও পড়ুন
হাসপাতালে স্থানাভাব, মেঝেতে শুয়ে করোনা-আক্রান্তরা – ভয়াবহ দৃশ্য স্পেনে

এতদিন শনাক্তহীন যেসব দেহ পুলিশ উদ্ধার করত, তাঁদেরই দাহ করা হত ধাপায়। এখন থেকে করোনা আক্রান্তদেরও দাহ করা হবে সেখানে। জীবনের কি অদ্ভুত পরিহাস! ভরভরন্ত সংসার থাকলেও করোনায় মৃতের পাশে থাকার কেউ নেই। শহরের বর্জ্য পদার্থ ফেলার জায়গায় হবে তাঁর শেষকৃত্য। এই ভয়াল মারণ রোগ কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের? এভাবেই কি বেওয়ারিশ লাশের মতো শেষকৃত্য কোনো মানুষের প্রাপ্য? উল্টোদিক থেকে আরেকটা বিষয়ও ভাবতে হবে। সংক্রমণ রোধ করতে এটুকু সাবধানতা হয়ত প্রয়োজন। সবই ঠিক আছে, শুধু মনে পড়ছে শরৎচন্দ্রের ‘দেবদাস’ উপন্যাসের শেষ লাইনটার কথা— “মরিবার সময় যেন কাহারও এক ফোঁটা চোখের জল দেখিয়া সে মরিতে পারে।”

আরও পড়ুন
করোনার টেস্ট কিট তৈরি করল ভারত নিজেই, মাত্র ৬ সপ্তাহের প্রচেষ্টায় সাফল্য

তবে করোনায় এ রাজ্যে যাতে একজনও মারা না যায়, প্রার্থনা সেটুকুই।     

More From Author See More

Latest News See More