মানুষ যে সৃষ্টিশীল তার প্রথম পদক্ষেপ শুরু হয় সেই ছোটবেলার স্কুলের খাতার পাতা ছিঁড়ে এরোপ্লেন কিংবা নৌকা বানানো দিয়েই। শুধু ছেলেবেলা কেন, আজকাল রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে প্রায়ই যে লিফলেটগুলো আমাদের দিকে এগিয়ে আসে, তা তো এই শিল্পকর্মের মূল হাতিয়ার! লিফলেটে কী লেখা আছে, কজনই বা পড়ে দেখেন! সেটা নিয়ে চট করে একটা নৌকা কিংবা এরোপ্লেন বানিয়ে ফেলতে প্রায় সবাই সিদ্ধহস্ত। এই শিল্পের যদিও একটা গালভরা নাম আছে, ‘অরিগ্যামি’।
আরও পড়ুন
নিজের হাতেই এঁকেছিলেন অ্যাসটেরিক্সকে, চলে গেলেন কমিকসটির স্রষ্টা অ্যালবার্ট ইউদেরজো
কিন্তু তাই বলে কাগজ দিয়ে বানিয়ে ফেলা এরোপ্লেনের যে এত জোর, তা বোধ হয় অনেকেই জানতেন না! জোর বলছি কেন? কারণ এই কাগজের এরোপ্লেন বানিয়েই গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড-এ নিজের নাম তুলেছেন জন কলিনস নামের এক আমেরিকান ভদ্রলোক। ছেলেবেলা থেকেই এই ঝোঁক ছিল তাঁর। তাই জাপানি অরিগ্যামির প্রথাগত শিক্ষাও নিয়েছেন। বিভিন্ন রকম পেপার ক্রাফট বানানো এবং বিভিন্ন মেলায় তার প্রদর্শনী করা এসবই ছিল কলিনস - এর ভালোলাগার অন্যতম দিক। কিন্তু প্রদর্শনী থেকে সোজা গিনিস বুকের পাতা - এ যেন তাঁর স্বপ্নের উড়ান।
আরও পড়ুন
পেনশনের টাকায় তৈরি করলেন ব্রিজ, গ্রামের উন্নয়নে নিঃসঙ্গ এক বৃদ্ধের লড়াই
২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জন কলিনসের বানানো এই প্লেনটি নিক্ষেপ করেন জো আয়ুব নামের আর এক আমেরিকান। আর সেই সঙ্গে ২০০৩ সালের স্টিফেন ক্রেগারের ২০৭ ফুটের ওয়ার্ল্ড রেকর্ডকে এক লহমায় পিছনে ফেলে দিয়ে এগিয়ে গেলেন জন কলিনস। ভাবা যায়! একটা কাগজের এরোপ্লেন সে কিনা ২২৬ ফিট ১০ ইঞ্চি পথ হওয়ায় ভাসতে পারছে। আপনি যদি ফুটবল মাঠের একপ্রান্ত থেকে দাঁড়িয়ে এটাকে হওয়ায় ভাসিয়ে দেন, অবলিয়ায় সে প্রায় ওপর প্রান্তে পৌঁছে যাবে।
আরও পড়ুন
বাড়ি-বাড়ি ঘুরে বই সংগ্রহ, পৌঁছে দেন দুঃস্থ পড়ুয়াদের কাছে – দিনবদলের লড়াই সন্দীপের
জো আয়ুবের কথায় স্পষ্ট বোঝা যায় যে, প্লেনটি বানানোর প্রতিটি স্তর থেকে রেকর্ড উড়ানের প্রতিটি পদক্ষেপে থেকে যায় পরিশীলিত দক্ষতা। হিসেব করে, নিয়ম মেনে অতিক্রম করা। অবশ্য কলিনস কিংবা আয়ুব দুজনের থেকে এটাই প্রত্যাশিত, কারণ দুজনেই কর্মসূত্রে বিমান বাহিনীর সঙ্গে জড়িত। তাই বোধহয় এত সহজেই এমন হিসেবি পদক্ষেপ।
আরও পড়ুন
১৭০ বছর আগেই হারিয়েছিলেন সাহেবকে, ভুলে যাওয়া এক বাঙালি দাবাড়ুর গল্প
কলিনসের কথায়, ক্রেগারই তাঁর এই সাফল্যের সূত্রধর। তিনি ক্রেগারের রেকর্ডকে ভিত্তি করে এগিয়ে গেছেন নিজের লক্ষ্যে। এ এমন এক প্রতিযোগিতা যেখানে সৌহার্দ্য মূল চাবিকাঠি। যদিও, অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জিতে যাওয়া কলিনস দিব্যি জানেন, নিজের রেকর্ডকে নিজেই ভাঙতে হবে। আর তাই অনায়াসেই বলতে পারেন, এই তো সবে শুরু, দ্য গেম ইজ অন।