ছোটোরা তো দুরন্ত হবেই। খেলতে গিয়ে কখনো হাত-পা ভাঙবে তো কখনও মাথায় চোট লাগবে। আর মাথায় চোট লাগলেই ডাক্তার বলবে এমআরআই বা সিটি স্ক্যান করে আনতে। এখানে চুম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে ব্রেনের ছবি তোলা হয় নানাদিক থেকে। কাটাছেঁড়ার কোনো বালাই নেই। কিন্তু বীভৎস গঠনের এইসব বড়ো বড়ো যন্ত্র দেখলেই যেন মনের মধ্যে ভয় লাগে। শুধু তো ছোটোরাই নয়, টেস্ট প্যানেলে রীতিমতো জড়সড় হয়ে থাকে বড়রাও। "কিচ্ছু হবে না। তুমি তো সাহসী।" এমন স্তোকবাক্য দেন অনেক অভিভাবকই। কিন্তু তাতেই কি ভয় যায়? দেখা গিয়েছে সারা পৃথিবীতে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ শিশুকে এমআরআই-এর জন্য অজ্ঞান করতে হয়।
আরও পড়ুন
১০০০ শিশুর চিকিৎসার খরচের দায়িত্ব নিয়েছেন এই বিখ্যাত ফুটবলার
শিশুমনের এই ভয় কি আদৌ বিব্রত করে চিকিৎসকদের? তেমন কিছু অবশ্য দেখা যায় না। তবে শিশুদের মনস্তত্ত্বের উপর যে বেশ খারাপ প্রভাব পড়ে, একথা বলেন অনেকেই। কিন্তু সেসব তো বিজ্ঞানের জটিল কথা। রাক্ষসের মুখের মতো একটা যন্ত্রের ভিতর ঢুকে যাওয়ার আগে যখন কান্নায় ভেঙে পড়ে শিশুরা, সে এক মানবিক অনুভূতি। সেই অনুভূতিই ছুঁয়ে গিয়েছিল ডগ ডায়েজকে। ইউনিভার্সিটি অফ পিটসবার্গ হসপিটালের একজন শিল্প উদ্ভাবক তিনি। এতদিন যন্ত্রপাতির কার্যক্ষমতা বাড়ানোর কথাই ভাবতেন। কিন্তু এক ছোট্ট মেয়ের কান্না তাঁকে বিব্রত করল। ভাবলেন যন্ত্রের চেহারাই যদি আপাদমস্তক বদলে ফেলা যায়।
আরও পড়ুন
নেই-হাত মধ্যবিত্তদের মসীহা তিনি, স্বল্পমূল্যে কৃত্রিম হাত বানিয়ে কামাল ২৮-এর প্রশান্তর
যেমন ভাবনা তেমনই কাজ শুরু। বানিয়ে ফেললেন এক অভিনব এমআরআই মেশিন। শিশুমন অ্যাডভেঞ্চারের আকর্ষণেই ধরা দেবে সেখানে। যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করলেন একটি এআই। ছোটোদের সঙ্গে কথা বলবে সে। ডেকে নেবে এক অজানা রহস্যের মধ্যে। সেখানে একলা সমুদ্রের মধ্যে ছোট্ট নৌকা নিয়ে যেন কোনো কল্পনার জগতে চলে যাবে ছোটোরা। আর মাথাটা একবার স্ক্যানারের মধ্যে ঢুকে গেলে, মাথার আশেপাশে অসংখ্য নাম না জানা মাছ আর রংবেরঙের আকাশ।
আরও পড়ুন
৪৬ বছর ধরে বিনামূল্যে চিকিৎসা করছেন এই ডাক্তারবাবু, ভাত না খাইয়ে ছাড়েন না রোগীদের
ডায়েজের এই যন্ত্র এর মধ্যেই একাধিকবার ব্যবহার করা হয়েছে। অজ্ঞান করতে হয়নি ছোটোদের। কান্নাকাটির বালাই নেই। তারা হাসতে হাসতে শুয়ে পড়ছে টেস্ট প্যানেলে। আর স্ক্যানার থেকে বেরিয়েও আসছে হাসিমুখে। সেই হাসিমুখগুলো দেখেই খুশি ডায়েজ। প্রথম যন্ত্রটির নাম দিয়েছেন 'কোরাল সিটি অ্যাডভেঞ্চার'। এরপর এরকম আরও ডিজাইন বানানোর পরিকল্পনা আছে তাঁর। দেশবিদেশের নানা রূপকথাকে মিলিয়ে দিতে চাইছেন। তবে সেখানে রাক্ষস নেই। আছে প্রকৃতির অনাবিল আনন্দ। শিশুরা খেলতে খেলতে পৌঁছে যাবে সেইসব রূপকথার জগতে। আর বাকি কাজটা চিকিৎসক করবেন নিঃশব্দে। স্ক্যান করার পর যথারীতি রিপোর্ট দেখে শুরু হবে চিকিৎসা। সবই হবে, শুধু ছোটোদের খেলাধুলোর প্রবণতাকে আঘাত না করে।