হয়তো করমর্দনের জন্য বাড়িয়ে দিয়েছেন হাত। দেখলেন, উল্টোদিকের মানুষটার হাতই নেই। আপনার মনে কী প্রতিক্রিয়া হবে? সহানুভূতি ছাড়া আমরা আর কীই বা দিতে পারি? কিন্তু, শুধু সহানুভূতিতেই হাল ছাড়েননি প্রশান্ত। প্রশান্ত গেড। মধ্যপ্রদেশের এই তরুণ বানিয়েছেন নতুন প্রস্থেটিক হাত। আর সেই হাতই ‘সক্ষম’ করে তুলছে অজস্র মানুষকে।
সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতিবছর ভারতে প্রায় ৪০,০০০ মানুষের হাত কাটা যায় কোনো না কোনো দুর্ঘটনায়। তাদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ মানুষেরই সুরাহা জানা নেই। প্রস্থেটিক হাত লাগাতে যা খরচ, তা এদের সাধ্যের বাইরে। এইসব মানুষের জন্যই স্বল্পমূল্যে নতুন প্রস্থেটিক হাত তৈরি করেছেন ২৮ বছরের প্রশান্ত।
অনেকের মতোই দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে প্রশান্ত ভর্তি হয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে, ইলেকট্রনিক্স পড়তে। কিন্তু ক্রমশই আবিষ্কার করেন, তাঁর ভাবনার সঙ্গে কলেজের পড়াশোনার বিস্তর ফারাক। প্রশান্ত চিরকালই নতুন কিছু আবিষ্কারের স্বপ্ন দেখতেন। তৃতীয় বর্ষে কলেজ ছেড়ে রোবটিক্সের কোর্সে যোগ দেন তিনি। পাড়ি দেন পুনেতে। সেখানে পড়াকালীন জানতে পারেন নিকোলাস হুচিতের সম্পর্কে। নিকোলাস বায়োনিক হাত নির্মাতা। নিজেই নিজের কাটা হাতের জন্য বায়োনিক হাত তৈরি করেছিলেন নিকোলাস। তিনিই হয়ে ওঠেন প্রশান্তের অনুপ্রেরণা।
পুনেতে থাকাকালীনই প্রশান্তের দেখা হয় একটি সাত বছরের বাচ্চা মেয়ের সঙ্গে। জন্ম থেকেই দুটি হাত নেই মেয়েটির। প্রশান্ত মেয়েটির জন্য প্রস্থেটিক হাতের সন্ধান করতে থাকেন। কিন্তু ক্রমশ জানতে পারেন, প্রস্থেটিক হাত এতটাই ব্যয়বহুল যে, তা সেই মেয়েটির পরিবারের পক্ষে বহন করা অসম্ভব। আর এখান থেকেই তার জীবন নতুন মোড় নেয়।
২০১৫ সালে, দীর্ঘদিন গবেষণার পর প্রশান্ত তৈরি করেন প্রস্থেটিক হাত। এরপর, ২০১৬ সালে ইনালি নামে একটি সংস্থার জন্ম দেন তিনি। ইতিমধ্যেই প্রায় ১৫০০টি প্রস্থেটিক হাত বিভিন্ন মানুষের কাছে বিনামূল্যে পৌঁছে দিয়েছেন প্রশান্ত। আর, প্রায় ৩০০০ জন মানুষ প্রস্থেটিক হাত পেয়েছেন মাত্র ৫০,০০০ টাকায়।
শুনতে গল্পের মতো লাগলেও, প্রশান্তের এই দীর্ঘ চলার পথ কিন্তু খুব একটা মসৃণ ছিল না। এসেছে অনেক বাধাও। শুনতে হয়েছে নানা বিরূপ মন্তব্য। কিন্তু কোনো কিছুই তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন তিনি। আর তাই আজ তাঁর ‘আবিষ্কার’ সাহস জোগাচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে। সাহায্যের হাত বোধহয় একেই বলে, তাই না?