মানুষের ইতিহাসকে কতরকম ভাবে দেখা যায়? কেউ হয়তো সভ্যতার ইতিহাস বলবে, কেউ যুদ্ধের। কেউ আবার অন্যান্য প্রসঙ্গও আনবে। আসলে রাস্তাটা অনেক রকম। তার নানা গলি, নানা পথ। প্রতিটা বাঁকে যেন নতুন তথ্য, নতুন দৃশ্য। কত চোরাগলি আমরা খুঁজেও পাই না। আচ্ছা, মানুষের ইতিহাস কি অত্যাচার আর মৃত্যুরও ইতিহাস নয়? নানা নিয়মের গেরোয়, অপরাধে আমরা শাস্তি দিয়েছি। কখনও অল্প, কখনও সেটাই সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে চলে যায়। নৃশংস থেকে আরও নৃশংসতর হয়েছি আমরা। সাক্ষী থেকেছে ইতিহাস…
আরও পড়ুন
করোনা-আক্রান্তের মৃত্যু হলে শেষকৃত্য ধাপায়, নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত প্রশাসনের
ধরা যাক, আপনাকে একটি ঘরে বেঁধে রাখা হল। আর কিচ্ছু না। ক্ষুধা, তৃষ্ণা বলতে সেরকম কিচ্ছু নেই। সমস্ত কাজ ওই ঘরেই সারছেন। একটু একটু করে মিশে যাচ্ছেন মাটির সঙ্গে। একসময়, সব শেষ হয়ে গেল। এরকম যন্ত্রণা দিয়ে কে মারবে আপনাকে, ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন নিশ্চয়ই! প্রাচীন পারস্যে এসব ভাবাভাবির সময় দিত না। স্ক্যাফিজম— কোনো নতুন মতবাদ নয়; শাস্তির নিয়ম। একজনকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে একটি নৌকার ভেতর হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হত। আর খাওয়ানো হত। জামাই আদর অবশ্যই নয়, খাওয়ানো হত কিলো কিলো দুধ আর মধু। ফলস্বরূপ, ডায়রিয়া। এটাই ছিল উদ্দেশ্য। ব্যস, আর কিচ্ছু করা হত না। কারণ শাস্তির আসল জিনিস এবার শুরু। যাবতীয় প্রাতঃকর্ম ওখানেই সারতে হত। সে যে বন্দি! এদিকে যাবতীয় পোকামাকড়, জীবাণুর আড্ডা হয়ে উঠত ওই দুর্বল শরীরটা। এভাবেই, তিলে তিলে, কষ্ট পেয়ে মৃত্যু হত।
আরও পড়ুন
প্রথম বাঙালি যুদ্ধবিমান চালক তিনি, মৃত্যুর আগে ধ্বংস করেছিলেন শত্রুপক্ষের ৯টি বিমান
পারস্য থেকে গ্রিসে যাওয়া যাক। এই দুই দেশেই প্রাচীন সভ্যতা, সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। সেই সঙ্গে তৈরি হয়েছিল নতুন নতুন নিয়ম। সেটা সমাজের, আবার শাস্তিরও। তারই একটি হল ‘ব্রাজেন বুল’। ব্রাজেন শব্দটি ব্রোঞ্জকেই চিহ্নিত করে। একটি বিশাল ব্রোঞ্জের তৈরি ষাঁড় রাখা থাকত বধ্যভূমিতে। ধাতুর, কিন্তু ভেতরটা ফাঁপা। সেখানে যাওয়ার দরজা থাকত। যাদের শাস্তি দেওয়া হবে, তাদেরকে সেখানে পুরে দেওয়া হত। তারপর? ওই পুরো ব্রোঞ্জের কাঠামোটিকে গরম করা হত! যত উত্তাপ বাড়ত, ভেতরের মানুষটিও চিৎকার করতে থাকত। পালানোর যে জায়গা নেই! ওই গরম যে তাকে সেঁকে দিচ্ছে। আর তার আর্তনাদ বেরিয়ে আসত ষাঁড়ের নাক দিয়ে। শেষ পরিণতি কী ছিল, সেটা নিশ্চয়ই সহজেই অনুমেয়! রোমান সাম্রাজ্যেও এই পদ্ধতির প্রচলন ছিল। কথিত আছে, এক খ্রিস্টান পাদ্রি, সেন্ট ইয়ুসটেসকে তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে বেঁধে এইভাবে পুড়িয়ে মারা হয়…
আরও পড়ুন
মৃত্যুর ১৪ বছর পর ফিরে এলেন ‘তিনি’, দাবি সিংহাসনের – বর্ধমানের জাল রাজার গল্প
জোকারের সঙ্গে তো আমরা অনেকেই পরিচিত। হ্যাঁ, সিনেমা আর কমিকসের জোকারের কথাই বলা হচ্ছে। তার মুখটা খেয়াল করেছেন? ঠোঁটের পাশ থেকে খানিকটা চিরে দেওয়া হয়েছে! যাতে সবসময় একটা হাসি হাসি মুখ থাকে। জোকার অবশ্য সজ্ঞানে করেছিল এটা। কিন্তু সে ‘গ্লাসগো স্মাইল’-এর কথা জানত কিনা, জানা যায়নি। হুবহু একই পদ্ধতি। তবে যন্ত্রণাটা আরও ব্যাপক। ঠোঁটের দুইপাশ থেকে কান পর্যন্ত চিরে দেওয়া হয় অভিযুক্তের। তারপর চলত অত্যাচার। যত মারত, ততই অভিযুক্ত চিৎকার করত। কিন্তু ওখানেও যে সমস্যা। কাটা মুখে যন্ত্রণা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। যতই হাসি এঁকে দেওয়া হোক, ব্যাপারটা যে মজাদার ছিল না, সেটা বলাই বাহুল্য। স্কটল্যান্ডে বিংশ শতকে এই শাস্তি খুবই প্রচলিত ছিল। শুরুটাও হয়েছিল গ্লাসগো থেকে। তাই তো এমন নাম…
আরও পড়ুন
সন্তানকে জলে ভাসিয়ে দিলেন বাবা-মা, পরিণতি ডুবে মৃত্যু অথবা কুমিরের পেট
হাঁটতে হাঁটতে কাঠের আসবাব তৈরির দোকান অনেকেই দেখতে পান। কীভাবে করাত দিয়ে কেটে, পালিশ করে, ঘষে একটা রূপ দেওয়া হয়। যেন একটা শিল্প! এবার ওই কাঠের জায়গায় একজন মানুষকে কল্পনা করুন। শিউরে উঠছেন না? তখন আর এটা শিল্প থাকছে না। প্রাচীন রোম, স্পেন, রাশিয়ায় এমন শাস্তি খুবই ‘বিখ্যাত’ ছিল। একজন জলজ্যান্ত মানুষকে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হত। তারপর, করাত দিয়ে দু’ভাগ করা হত। জীবন্ত অবস্থাতেই নরক যন্ত্রণার ছোঁয়া পেয়ে যেত ওই মানুষগুলো। কিন্তু উল্টো করে ঝোলানো হত কেন? বিজ্ঞানীরা পরে দেখেছেন, এইভাবে থাকলে মাথায় রক্ত স্বাভাবিক থাকে। ফলে বেশিক্ষণ পর্যন্ত একজন জীবিত থাকতে পারেন। শেষ পর্যন্ত নিজেকে ‘দ্বিখণ্ডিত’ দেখার অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল, সেটা বরং বাদ থাক…
আরও পড়ুন
মৃত্যুতেও রেহাই নেই, প্রফুল্ল চাকীর মাথা কেটে পাঠানো হল কলকাতায়
সাহসী লোকেরা নিজেদের মাঝে মাঝে ঈগলের সঙ্গে তুলনা করতে খুবই ভালোবাসেন। ওইরকম তেজ, ওই বীরত্ব— আহা! ঈগল হওয়ার ইচ্ছা জাগলেও দোষ দেওয়া যায় না। ধরুন যদি ঈগল হন! একেবারেই স্বপ্ন না। একটা সময় এটাই ছিল শাস্তি দেওয়ার অন্যতম নৃশংস নিয়ম। নাম ছিল ‘ব্লাড ঈগল’। বাংলায় তর্জমা করলে হয়, রক্তাক্ত ঈগল। অভিযুক্তকে প্রথমে উপুড় হয়ে শোয়ানো হত। তারপর পিঠের দিক থেকে মাংস, চামড়া সব কাটা হত। হ্যাঁ, জীবিত অবস্থাতেই! বেরিয়ে আসত ফুসফুস, শিরদাঁড়া, পাঁজর। ওই পাঁজরকেই কেটে কেটে বের করে রাখা হত। পিঠ থেকে উঁচু হয়ে আছে খোলা হাড়; নীচে জলজ্যান্ত অঙ্গ! রক্তে ভেসে যেত সমস্তটা। যেন লাল একজনের পিঠে ডানা! সেখান থেকেই নাম ‘ব্লাড ঈগল’। ঠিকঠাক কাজটি করলে বেঁচে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকত। তবে মারাও যেত অনেকে। অত্যাচার করতে গেলে অত মায়াদয়া থাকলে কি চলে!
Powered by Froala Editor