বাংলাদেশের ক্রীড়া মানচিত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট তা আমরা সবাই জানি। পাশাপাশি এগিয়ে চলেছে অন্যান্য খেলাও। যেমন শুটিং। আর শুটিংয়ের সঙ্গে যারা পরিচিত, তাঁরা অবশ্যই চেনেন এই নাম, আসিফ হোসেন খান। বাংলাদেশের স্টার শুটার। মনে করা যাক, ২০০২ সালের সেই কমনওয়েলথ গেমস; যেখানেই শুটিংয়ে সমস্ত ভারী ভারী নামকে পেছনে ফেলে সোনা জিতলেন আসিফ। এখনও অবধি শুটিংয়ে বাংলাদেশের একমাত্র কমনওয়েলথ স্বর্ণপদক সেটি। আর সেই পদকই নিলাম করতে চলেছেন আসিফ হোসেন খান। কারণ? করোনার এই ভয়ংকর পরিবেশে যদি কিছু ফান্ড তৈরি করা যায়, যদি এভাবেই দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন তিনি…
আরও পড়ুন
শুটিং-এ বিশ্বরেকর্ড গড়ে সোনা বাংলার মেহুলির, নজর অলিম্পিক্সেও
সাল ২০০২। ম্যানচেস্টারে ১৭তম কমনওয়েলথ গেমস। চলছে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের ইনডিভিজুয়াল ইভেন্ট। ফাইনাল রাউন্ড; এরপরেই ঘোষণা হবে পদক জয়ীদের নাম। প্রতিযোগিতায় রয়েছেন ভারতের স্টার শুটার অভিনব বিন্দ্রা, যিনি পরবর্তীতে সোনা জেতেন অলিম্পিকে। একই ইভেন্টে খেলছেন বাংলাদেশ থেকে আসা এক অনামী কিশোর, আসিফ হোসেন খান। বয়স মাত্র ১৫ বছর। খেলা শুরু হয়। টানটান উত্তেজনার পর পদক তালিকায় নাম উঠে আসে আসিফের। তাও একেবারে প্রথম স্থানে, অর্থাৎ সোনা! বাংলাদেশ তো বটেই, গোটা বিশ্ব চমকে ওঠে এমন ঘটনায়। অভিনব বিন্দ্রাও হার মেনেছিলেন সেইদিন। শুটিংয়ে বাংলাদেশের ওই কিশোর আসিফের যাত্রা শুরু হয়ে গিয়েছিল সেই মুহূর্ত থেকেই। গলায় উঠল সোনার পদক। কমনওয়েলথ গেমসের শুটিংয়ে বাংলাদেশের একমাত্র সোনা জয় এটি।
আরও পড়ুন
জাতীয় স্তরে খেলার মুখেই আক্রান্ত ক্যানসারে, মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই ১৭ বছরের রাইফেল শুটারের
তারপরও অনেক কৃতিত্বের অংশীদার হয়েছিলেন আসিফ খান। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি শুটার যিনি অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন। ২০০৪ সালের সাফ গেমস, ২০০৮-এর সাউথ এশিয়ান শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপেও সোনা জিতেছিলেন। এখন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি।
আরও পড়ুন
ভরসা হুইলচেয়ার, ঘুরে দাঁড়াতে হাতে বন্দুক তুলে নিয়েছে কলকাতার অঙ্কুর
করোনার জন্য এখন গোটা বিশ্ব সংকটে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। এই মুহূর্তে সেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। এছাড়াও, দেশের অনেক অংশেই আর্থিক দুরবস্থা নেমে এসেছে। এমনই পরিস্থিতিতে নিজের কমনওয়েলথের স্বর্ণপদক নিলামে রাখতে চলেছেন আসিফ হোসেন খান। নিলাম থেকে যা টাকা উঠবে, সমস্তটাই বাংলাদেশের করোনা মোকাবিলায় সাহায্যের জন্য দান করবেন তিনি। দেশের মানুষেরা যাতে সুস্থভাবে, ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে, সেটাই তো আসল চাওয়া। কিন্তু নিজের সেরা সম্মানের পদক নিলামে দেওয়ার আগে কিছু মাথায় আসেনি? শুটার আসিফের অকপট জবাব, তিনি সারাজীবন দেশের কথা ভেবেছেন। দেশের জন্য কাজ করেছেন। শুটিংয়েই হোক, বা কোচিংয়ে। এখনও তাই করে চলেছেন। বিপদের দিনে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোই তাঁর কর্তব্য। নিজের পদকের চেয়ে দেশের মানুষের জীবন তাঁর কাছে অনেক বেশি জরুরি।