গন্ধগোকুল, নামটা অনেকের কাছেই পরিচিত। প্রাণীটিকে চোখে না দেখলেও জানি, একসময় এদেশের গ্রামেগঞ্জে বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াত এই প্রাণীটি। সারা দেশে তার বৈচিত্র্যও কম ছিল না। এই গোত্রেরই একটি প্রজাতি মালাবার সিভেট। দীর্ঘদিন ধরে অবশ্য প্রাণীটির কোনো খোঁজ ছিল না। নব্বইয়ের দশকের শুরুতেও বনে-জঙ্গলে এদের খুঁজে পাওয়া যেত মাঝে মাঝে। তারপর প্রায় ৩ দশক জুড়ে সেটুকু হদিশও মেলেনি। সবাই প্রায় ধরেই নিয়েছিলেন, মালাবার সিভেট বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন
রাস্তাঘাট জনমানবহীন, ঘুরে বেড়াচ্ছে পশুপাখি – পৃথিবীজুড়ে ছবি এমনটাই
এর মধ্যে অনেক প্রাণীই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে পৃথিবী থেকে। মানুষ বেশিদিন তাদের কথা মনে রাখেনি। কিন্তু ৩ দশক পর আবার ফিরে এল মালাবার সিভেট। খুঁজে পেতে আর বনবাদাড়ে যেতে হল না। একদম শহরের রাস্তায় দিনেদুপুরে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল বিরল এই প্রাণীটিকে। এমন দৃশ্যের সাক্ষী থাকল কেরালার কালিকট জেলা। বুধবার সকালে এই বিরল দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করলেন ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস অফিসার সুশান্ত নন্দ। তাঁর ট্যুইটার পোস্টের উল্লেখ অনুযায়ী, পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় এখনও মোটামুটি ২৫০টি প্রাপ্তবয়স্ক মালাবার সিভেট আছে। তবে ১৯৯০ সালের পর আর তাদের কাউকেই দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন
মালিক কোয়ারেন্টাইনে, দোকান থেকে স্ন্যাকস এনে দিল পোষ্য কুকুর
বিস্ময় এখানেই শেষ নয়। সেই রাত্রেই একইরকম ঘটনার সাক্ষী চণ্ডীগড় শহরও। রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল একটি সম্বর হরিণকে। চিড়িয়াখানায় বা অভয়ারণ্যে দেখা পাওয়া যায় সম্বর হরিণের। তাই কারোর কাছেই চেহারাটা খুব অপরিচিত নয়। কিন্তু শহরের রাস্তায় এমন বিরল প্রাণীর পদসঞ্চার, আশ্চর্য করে বৈকি।
আরও পড়ুন
কমছে দূষণ, বাড়ছে পাখি-প্রজাপতির সংখ্যা; স্তব্ধ কলকাতায় অন্যরকম প্রাণসঞ্চার
এমন ঘটনার খবর অবশ্য পৃথিবীর নানা দেশ থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল। সেই তালিকায় যোগ হল ভারতবর্ষের নামও। করোনার আতঙ্কে স্বাভাবিক জনজীবন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে সর্বত্র। ভারতবর্ষেও সরকারি নির্দেশে শুরু হয়েছে লক-ডাউন। শুনশান রাস্তাঘাট। মানুষ নেই, গাড়িঘোড়া নেই। ফলে প্রাণীদের চলাফেরার জন্য নিরাপদ হয়ে উঠেছে সমস্ত শহর। আর সেই আনন্দযজ্ঞে মেতে উঠেছে সমস্ত প্রাণীই। তাদের মধ্যে সংক্রমণের ভয় নেই, সচেতনতা নেই। আছে শুধু জীবনের অনাবিল আনন্দ। এতদিন শহরের অত্যন্ত কাছে থেকেও দূরে সরে থাকতে হত। নাহলে ব্যস্ত শহরে ঘটবে দুর্ঘটনা। কিন্তু এবার আর ভয় নেই। এরপর মানুষের জীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলে কি আমরা তাদের একটু নিরাপত্তা দেওয়ার কথা ভাবতে পারি? একটু মিলেমিশে থাকলে কি খুব মন্দ হয়?