গত মাসেই মুক্তি পেয়েছে ‘ছপক’ সিনেমাটি। দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত এই সিনেমা অ্যাসিড-আক্রান্ত লক্ষ্মী আগরওয়ালের জীবনকাহিনির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। লক্ষ্মী নিজেও দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে অ্যাসিড বিক্রির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাচ্ছেন। তারপরেও যে সমাজের সামগ্রিক মানসিকতা খুব বেশি বদলায়নি, তার প্রমাণ পেল কলকাতা। আজ, বৃহস্পতিবার কলকাতার কসবায় আবার অ্যাসিড আক্রান্ত হলেন এক তরুণী।
কসবার একটি স্কুলে ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলেন পূর্ণিমা দাস। বয়স ৩০ বছর। হঠাৎ হাজির হয় এক যুবক। চারপাশের কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝাঁপিয়ে পড়ে পূর্ণিমার ওপর। স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে আঘাত করে পূর্ণিমার মাথায়, এমনকি পূর্ণিমার দিকে ছুঁড়ে দেয় বোতলভর্তি অ্যাসিডও। পূর্ণিমার হাত পুড়ে যায় সেই অ্যাসিডে।
পরবর্তীকালে জানা যায়, যুবকের নাম জয়ন্ত দাস। সম্পর্কে পূর্ণিমার স্বামী। স্ত্রী’র ওপর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের সন্দেহ থেকেই এই আক্রমণ, জানিয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন
মুখ পুড়ে গেলেও পোড়েনি মন, আজও লড়াই থামেনি বাংলার অ্যাসিড আক্রান্তদের
পরিসংখ্যান জানায়, ভারতের অন্যতম নিরাপদ শহর কলকাতা। অথচ সেই শহরেই অ্যাসিড আক্রমণের ঘটনা, আবার। কিন্তু এত প্রচার, এত সচেতনতা সত্ত্বেও কেন বদলাচ্ছে না মানসিকতা? কলকাতার অ্যাসিড বিক্রি বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ মনীষা পৈলানের সঙ্গে কথা হল আমাদের। মনীষা প্রহরকে জানালেন – “যদি আমরা নিজেরাই না বাড়ির পাশ থেকে প্রতিবাদ শুরু করি, এই সমস্যার সমাধান হবে না। প্রত্যেকটা মানুষকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন এই সমস্যার সমাধানে। অন্যের ওপর আক্রমণ হচ্ছে, নিজেকে ‘সুরক্ষিত’ বলে দূরে সরিয়ে রাখলে, কোনোদিনই কোনো সুরাহা পাওয়া পাওয়া যাবে না।’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরও বন্ধ হয়নি প্রকাশ্যে অ্যাসিড বিক্রি। সাধারণ দোকান-বাজার থেকে সহজেই অ্যাসিড কিনতে পারে যে-কেউ। যতদিন না আইনের প্রয়োগ হচ্ছে ঠিকমতো, আশঙ্কা থেকে মুক্তি নেই। সম্পর্কের ওঠানামার জেরে অ্যাসিড আক্রমণের এই মানসিকতারও বদল দরকার। আর তা আসতে পারে শিক্ষার মাধ্যমেই।
আরও পড়ুন
গোটা দেশে, এমনকি কলকাতায় আজো প্রকাশ্যে বিকোচ্ছে অ্যাসিড, লড়াই থামেনি, বলছেন লক্ষ্মী আগরওয়াল
সার্বিকভাবে নারীজাতির প্রতি পুরুষের মানসিকতায় বদল না ঘটলে, এমন ঘটনা যে বারবার ঘটতেই থাকবে, বলছিলেন মনীষা। গত সপ্তাহেই হাওড়ার আন্দুলে ঘটেছে আরেকটি অ্যাসিড আক্রমণের ঘটনা। আড়ালেও কত ঘটে চলেছে, সে-তথ্য হয়তো পৌঁছয়ই না সংবাদমাধ্যমের কাছে।
কলকাতার আজকের ঘটনা সেই চিরকালীন প্রশ্নই উস্কে দিল আবার। ‘পুরুষতান্ত্রিক’ মনোভাব ও প্রতিশোধস্পৃহা থেকে কবে মুক্তি পাবে সমাজ? কবে নিশ্চিন্ত হতে পারবেন মহিলারা? আর কোনো অ্যাসিড আক্রমণ যেন না ঘটে এ-দেশে, আসুন, সেই প্রতিরোধই করি আমরা।