খাবারের জন্য লম্বা লাইন, কেউ বাড়ি ফিরছেন পায়ে হেঁটেই; ‘অসহায়’ দিল্লির ছবি

সাপের মতো দীর্ঘ রেখা চলে গিয়েছে এঁকেবেঁকে। দূর থেকে ছবিটা এমনই। কাছে গেলে বোঝা যায়, অজস্র মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে খাবারের প্রতিক্ষায়। প্রায় কারোর মুখেই মাস্ক নেই। কারোর কারোর মুখে বাঁধা রুমাল। স্যোসাল ডিসটেন্সিং? সেটা আবার কী? পেটে খাবার পড়লে তবে তো অন্য কিছুর চিন্তা! দেশজুড়ে করোনার আতঙ্কের মাঝে এমনটাই ছবি রাজধানী দিল্লির। অনাহার, যেন আরেক মহামারীর নাম।

আরও পড়ুন
কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে এলেন ৫ লক্ষ তরুণ-তরুণী

ওরা এসেছে অন্যান্য রাজ্য থেকে। বিহার, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ থেকে পাড়ি দিয়েছেন রাজধানী দিল্লির উদ্দেশ্যে। কেউ রিক্সা চালক, কেউ কারখানায় কাজ করে, আবার কেউ নির্মাণকর্মী। দিল্লির ব্যস্ত জনজীবনের মধ্যে থেকে একটু রোজগারপাতি হয়। সেই উদ্দেশ্যেই পড়ে থাকা বিদেশ বিভুঁইয়ে। কিন্তু এর মধ্যে ২১ দিনের লক-ডাউন যেন তাঁদের বেঁচে থাকার সমস্ত রসদ কেরে নিয়েছে। আশার কথা এই, সরকার তাদের দুবেলা খাবারের সংস্থান করেছে। কিন্তু সেইসব লঙ্গরখানার সামনে যে ছবি ফুটে উঠেছে, তা যেন কোনো বিস্মৃত দুর্ভিক্ষের স্মৃতিকেই উস্কে দিয়ে যায়। একেকটি শেল্টারের সামনে প্রতিদিন এসে দাঁড়াচ্ছেন ৫ হাজারের উপর মানুষ। কর্মচারীরা অবশ্য নিয়ম মেনে মাস্ক পড়ে, হাত ধুয়ে খাবার বিতরণ করছে। ন্যূনতম এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখছে। কিন্তু খাবারের প্রতিক্ষায় যে মানুষগুলো দাঁড়িয়ে আছেন? করোনার কথা তাঁরা সবাই শুনেছেন। কিন্তু পেটের জ্বালা যে বড় জ্বালা। তখন কি আর অন্য কিছুর কথা মনে থাকে?

আরও পড়ুন
করোনার বিরুদ্ধে লড়াই, ৫০০ কোটি টাকা অনুদানের ঘোষণা টাটা গোষ্ঠীর

খাবার পর বন্ধ স্কুলগুলিতে চলছে রাত্রিযাপন। সেখানকার অবস্থাও তথৈবচ। ছোট্ট ঘরে এত মানুষের ভিড়; কীভাবে দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব? অবশ্য কোনোভাবে যদি দেশে ফিরতে পারেন, তাহলেও একরকম হয়। সেই চেষ্টাও করেছেন অনেকে। কিন্তু যোগাযোগের সমস্ত ব্যবস্থাও যে বন্ধ। কিছু স্পেশাল বাসের ব্যবস্থা অবশ্য করা হয়েছে। কিন্তু সেই ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় কতটুকু? যেসব বাসে ৪০ থেকে ৫০ জন মানুষ বসতে পারে, তাতে ভিড় করছেন ২০০ মানুষ। কেউ ছাদে উঠছেন, ভিতরে যাঁরা থাকছেন তাঁরা নিজেদের মধ্যে জায়গা নিয়ে ঝামেলা করছেন। তারপরেও অনেকে জায়গা পাচ্ছেন না। বাসস্ট্যান্ডে চেঁচামিচি, লোক গিজগিজ করছে। কেউ আবার দীর্ঘ পথ হেঁটেই পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

আরও পড়ুন
করোনা-আক্রান্তের মৃত্যু হলে শেষকৃত্য ধাপায়, নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত প্রশাসনের

এদেশে প্রত্যেকটা মহামারী যেন এমন বীভৎস দিন ডেকে আনে। হবে নাই বা কেন? দিন-আনা দিন-খাওয়া মানুষের সংখ্যা যে প্রচুর। তাঁদের সারাদিনের পরিশ্রমের উপরেই তো দেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে রয়েছে। অথচ তাঁদের নিজেদের সঞ্চয় বলতে নেই কিছুই। অন্তত এমন সংকটের দিনেও কি আমরা একটু তাঁদের দিকে ফিরে তাকাতে পারি না? ভাইরাসের দাপট রুখতে লক-ডাউন অবশ্যই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এইসব মানুষদের নিরাপত্তার একটু ব্যবস্থা কি নেওয়া যায় না? এখনও তাঁদের নিরাপদে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে পারেন সরকার। প্রবাসী বাবার জন্য দুশ্চিন্তায় হয়তো তাঁর শিশু সন্তান অপেক্ষা করে আছেন। মানুষ হিসাবে এটুকু সহমর্মিতা তো তাঁরা আশা করতেই পারেন।

Latest News See More