সেই প্রাচীনকাল থেকেই সমুদ্রের অতলস্পর্শী রূপে মুগ্ধ হয়ে এসেছে মানুষ। আজও সমুদ্রের আকর্ষণে পর্যটকদের ভিড় জমে ওঠে উপকূলে। কিন্তু সেই রূপ কি আর আছে? বর্ণনার সঙ্গে মেলানো যায় না যে কিছুতেই। ক্রমাগত দূষণের প্রকোপে শুকিয়ে আসছে চেহারা। সুনামি থেকে শুরু করে ফনীর মতো ঝড়, এসবের কারণ তো সমুদ্রের বদলে যাওয়া চরিত্রই। তবে এর মধ্যেই আশার আলো দেখাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। বলছেন, উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে ৩০ বছরের মধ্যেই সমুদ্রের আগেকার সুস্থতা ফিরিয়ে আনা যাবে।
আরও পড়ুন
ঘরের খোঁজে ৩৭ হাজার কিমি পাড়ি সমুদ্রে, অনন্য নজির কচ্ছপের
পৃথিবীর প্রায় ৭০ শতাংশই সমুদ্রে ঢাকা। আর তার মধ্যে জীবজন্তুর বৈচিত্র্যও প্রচুর। অথচ কলকারখানা এবং বিশেষত জাহাজের বর্জ্য পদার্থ সমুদ্রে যে পরিমাণ দূষণ সৃষ্টি করছে, তাতে নাভিশ্বাস উঠেছে অনেক প্রাণীরই। আর সেইসঙ্গে চোরাশিকার তো আছেই। ক্রমশ বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার বিরাট কুঁজওয়ালা তিমি থেকে শুরু করে আমেরিকার এলিফ্যান্ট শীল বা জাপানের সবুজ কাছিম। সেইসঙ্গে বাড়ছে সমুদ্রের উষ্ণতা, জলস্তর, অম্লত্ব। অর্থাৎ বিরাট সমুদ্র অঞ্চল যেন এককথায় ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন
অতল জলের রহস্য রয়েছে নাগালেই, পৃথিবীর অন্যতম গভীর সমুদ্র খাত বঙ্গোপসাগরে
সমুদ্র জগতের এই বিপদ তো মানুষের অস্তিত্বকেও সংকটে ফেলেছে। তাই প্রশ্ন উঠছে, আগামী প্রজন্মের জন্য এ কোন পৃথিবী রেখে যাচ্ছি আমরা? তবে এখনও পর্যন্ত যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয় নয় বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ইতিমধ্যে প্রাণী সংরক্ষণের নানা প্রকল্প যথেষ্ট কাজে এসেছে। অস্ট্রেলিয়ার তিমির সংখ্যা তো বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণেই বেড়েছে। কিন্তু এটুকুই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন সমুদ্রের ভৌত চরিত্রকেও ফিরিয়ে আনা। আর সেই প্রযুক্তিও এখন আছে বলেই দাবি করছেন তাঁরা। শুধু প্রয়োজন একটু সচেতন উদ্যোগ। এই কাজে অবশ্য বেশ ভালোরকম অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু প্রতিটা দেশ এগিয়ে আসলে সেটা অসম্ভব তো নয়ই, বরং তার সুফল পাবেন প্রত্যেকেই।
আরও পড়ুন
সমুদ্রের নিচে এতগুলো বছর, কেমন আছে টাইটানিক?
সম্প্রতি এই সংক্রান্ত একটি আলোচনা প্রকাশিত হয়েছে নেচার প্রত্রিকায়। লেখকরা মানুষের সচেতনতাকেই গুরুত্ব দিতে চাইছেন। কিন্তু আমরা আদৌ সচেতন হচ্ছি কি? সমুদ্রের বেঁচে থাকা তো শুধু তার স্বর্গীয় সৌন্দর্যের জন্যই নয়, মানুষের অস্তিত্বের জন্যও প্রয়োজন। আর সেই কাজে এগিয়ে আসতে হবে প্রত্যেককেই।