ঘরের খোঁজে ৩৭ হাজার কিমি পাড়ি সমুদ্রে, অনন্য নজির কচ্ছপের

২৬ মাস ধরে উত্তাল সমুদ্রে রয়েছে সে। সাঁতার কেটে যাচ্ছে সমানে। যে করেই হোক, নিজের আসন্ন সন্তানদের জন্য উপযুক্ত বাসা খুঁজতে হবে তাকে। সেইজন্য ৩৭ হাজার কিমি পথ পাড়ি দেওয়া সমুদ্রে! এমনই কাণ্ড করেছে ইয়োশি। রক্তমাংসের মানুষ নয়, একটি স্ত্রী লগারহেড কচ্ছপ। তার এমনই কীর্তির কাহিনি ভাইরাল নেট দুনিয়ায়।

ইয়োশি’র কাহিনি শুরু হয় আজ থেকে ২০ বছর আগে। জখম অবস্থায় দক্ষিণ আফ্রিকায় তাকে উদ্ধার করা হয়। তারপর থেকে কেপ টাউনের টু ওশান অ্যাকোয়ারিয়ামেই ছিল সে। ডাক্তার, ট্রেনার— সবার মিলিত চেষ্টায় সুস্থ হয় ইয়োশি। কিন্তু সে তো সমুদ্রের জীবন। এরকম বদ্ধ জায়গায় থাকতে কার ভালো লাগে! অবশেষে সেই মুক্তির দিন এগিয়ে আসে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া হয় লগারহেড কচ্ছপটিকে।

এরপরের গল্পটা একটা দীর্ঘ যাত্রার। জীবনানন্দের কথা ধরলে, হাজার বছর ধরে পথ হাঁটা। কিন্তু হাজার নয়, ইয়োশির সমুদ্র পেরোনো ২৬ মাসের। জলে ছাড়ার আগে ওর শরীরে একটি ট্র্যাকিং ডিভাইস লাগিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকেই এই তথ্য পাওয়া গেছে। আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া, দীর্ঘ ৩৭ হাজার কিমি পথ সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছে সে! মানে প্রতিদিন গড়ে ৪৮ কিমি! ট্র্যাকড প্রাণীদের মধ্যে সবথেকে লম্বা যাত্রাটি করেছে ইয়োশি। শুধুমাত্র ঘর খোঁজার জন্য; যেখানে সে ডিম পাড়তে পারে। সন্তানদের বড়ো করতে পারবে।

ইয়োশি’র ঘটনা অবাক করেছে সকলকে। একটি প্রাণী এতদূর সাঁতরে চলে আসছে, সেটা কি কম আশ্চর্যের! একইসঙ্গে উঠে আসছে আরও একটি বিষয়। কচ্ছপদের ডিম পাড়ার জন্য বিশেষ একটি পরিবেশ দরকার। বর্তমানে মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের ফলে সেই পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিবেশ দূষণ তো আছেই। এই দুইয়ের থাবায় বিপন্ন কচ্ছপদের প্রজন্ম। ইয়োশির এই সমুদ্রযাত্রা আমাদের চমৎকৃত করলেও, এই বাস্তব সত্যটাকে ভুলে গেলে চলবে না। সমুদ্রের ধারে যেখানে কচ্ছপদের ডিম পাড়ার জায়গা, সেখানে দোকান, মানুষের ভিড় বা জোরালো আলো না-ই বা থাকল। ওরাও যাতে বাঁচে, সেটা দেখাটাও তো দরকার!

Latest News See More