সালটা ২০০৪। ফিফার পুরস্কারের মঞ্চে ঘোষণা হবে সেই বছরের ‘অর্ডার অফ মেরিট’-এর সম্মান। তালিকায় রয়েছেন একের পর এক কিংবদন্তি নাম। কাইজার বেকেনবাউয়ার, পেলে, ডি-স্তেফানো, পুসকাস, ববি চার্লটন, গার্ড মুলার, ক্রুয়েফ। যে নামগুলো শুনলে শ্রদ্ধায় সম্ভ্রমে ভরে ওঠে ফুটবল জগত। সেই তালিকায় ছিলেন আরও একজন। পরিচয়, তিনি এশীয়। আরও ভালো করে বললে, তিনি ভারতীয়, বাঙালি। তাঁর ফুটবল প্রজ্ঞা, দক্ষতা প্রশ্নাতীত। মুহূর্তে খেলোয়াড়দের মধ্যে চাগিয়ে দিতেন বাড়তি অ্যাড্রিনালিন। নিজের খেলোয়াড় জীবনেও তৈরি করেছিলেন একের পর এক মুহূর্ত। তিনি, প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। সারা ময়দান যাকে চেনে ‘পিকে’ নামে। সেই তালিকায় তো বটেই, এখনও অবধি এশিয়া মহাদেশ থেকে তিনিই এক ও একমাত্র যিনি ফিফার সর্বোচ্চ সম্মান পেয়েছেন।
আরও পড়ুন
থেমে গেল ‘ভোকাল টনিক’, ফুরোল লড়াই, দীর্ঘ অসুস্থতার পর প্রয়াত পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ফুটবল হিস্ট্রি অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকের বিচারে বিশ শতকের সেরা ফুটবলারদের মধ্যেও উজ্জ্বল ছিলেন তিনি। অবশ্য হওয়ারই তো কথা। ৮৪টি ম্যাচে ৬৫টি গোল; সেই সঙ্গে ১৯৬৪-এর এশিয়ান গেমস জয়। ১৯৬০ সালে অলিম্পিকে ভারতীয় ফুটবল দলকে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন। আর কোচ পিকে? তিনি তো অন্য জগতের! তাঁর ‘ভোকাল টনিক’-এর কথা কি কেউ ভুলেছে? ইস্ট-মোহন, দুই দলকেই কোচিং করিয়েছেন একসময়। তাঁর হাত ধরেই একই বছরে মোহনবাগানের ত্রিমুকুট জয়। ১৯৭২-এ জাতীয় দলে যুক্ত হওয়ার পর ১৯৮৬ সাল অবধি কোচিং করেন সেখানে। তাঁর সময়ই অলিম্পিকের কোয়ালিফাইং ম্যাচ খেলতে শুরু করে ভারত। এমন মানুষকে ভারতীয় ফুটবল কি কিরে ভুলবে! শুধু কি ভারত? গোটা বিশ্বের ফুটবলেই যে অবদান রেখেছিলেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্বীকৃতিস্বরূপই এত সম্মান…
আরও পড়ুন
অলিম্পিকে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে গোল, এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক – এক কিংবদন্তি বাঙালির গল্প
আজ, সেই গল্পগুলো স্মৃতি হয়ে গেল চিরদিনের জন্য। মানুষটি ঘুমিয়ে গেলেন বটে; কিন্তু ময়দানের কোণায় কোণায় তাঁর ডাক ঠিক থেকে যাবে। বাঙালি এত সহজে তাঁদের ‘প্রদীপ’-কে নিভে যেতে দেবে নাকি!