থেমে গেল ‘ভোকাল টনিক’, ফুরোল লড়াই, দীর্ঘ অসুস্থতার পর প্রয়াত পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়

তাঁর ভোকাল টনিকের গল্প ময়দানের দিকে দিকে ঘোরে আজও। শুধু কোচিং নয়, টিমে ম্যান ম্যানেজমেন্টও যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, সেটাকে চিনিয়েছিলেন তিনি। খেলোয়াড় জীবনে যেমন ছিলেন ধুরন্ধর, কোচ হিসেবেও ছিলেন কিংবদন্তি। তিনি, বাঙালির ‘পিকে’। প্রদীপ কুমার ব্যানার্জি। দীর্ঘ অসুস্থতার পর অবশেষে দৌড় থামল জীবনের। আজ সকালে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেলেন পিকে ব্যানার্জি।    

আরও পড়ুন
ফুটবল ও ক্রিকেট – দুই খেলাতেই ময়দান কাঁপাতেন বাংলার চুণী গোস্বামী

১৫ বছর বয়সে বিহারের হয়ে সন্তোষ ট্রফিতে নেমেছিলেন। সেই সময় থেকেই বড় মাঠে ফুটবলের ছোঁয়া। খেলেছেন ফরোয়ার্ডে। তারপর, ১৯৫৪ সালে আরিয়ান ও পরে ইস্টার্ন রেলওয়ের মাধ্যমে ক্লাব ফুটবলের যাত্রা শুরু। তিনটে এশিয়ান গেমসে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন পিকে। ১৯৬২-এর এশিয়ানে সোনাজয়ী দলেরও অন্যতম বড় ভূমিকায় ছিলেন তিনি। ১৯৫৬-এর অলিম্পিকেও অংশ নিয়েছিলেন। পরে দেশের ক্যাপ্টেনও হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন
সদ্য স্বাধীন ভারতের ময়দান কাঁপিয়ে দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের ‘পঞ্চপাণ্ডব’

১৯৫৬ সালে মোহনবাগানের বিদেশ সফরের সময় অন্যতম মুখ ছিলেন পিকে। কোচ হিসেবে নয়, ফুটবলার হিসেবে। গোলও করেছিলেন অনেক। শুধু একবার বিপক্ষের চালাকিতে বোকা বনে গিয়েছিলেন সবাই। খেলার মাঠে নয়, বাইরে। হংকংয়ের একটি দলের সঙ্গে তখন খেলা। ম্যাচের আগের দিন সমুদ্রে ঘুরতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানায় ওই দলটি। সবুজ-মেরুন খেলোয়াড়রা তো রাজি। কিন্তু পরের দিন আর কিছুতেই নিজেদের খেলাটা খেলতে পারে না কেউ। পিকে-ও অবাক হয়ে গেছেন। পরে আবিষ্কার করলেন উল্টোদিকের টিমের চালাকি। সমুদ্রের নোনা জলে দাপাদাপি করে শরীর ভারী হয়ে যায়। ব্যস, ম্যাচ চলে যায় অন্য দিকে। অবশ্য ওই একটিই ম্যাচ ছাড়া আর কোনো ম্যাচে হারেননি পিকে’রা।

আরও পড়ুন
পরজন্মেও মোহন-সমর্থক হতে চেয়েছিলেন উমাকান্ত, আত্মহত্যার ৪৫ বছর পর ফিরল সেই স্মৃতিই

তবে খেলোয়াড় পিকে’র পাশে অবশ্যই উঠে আসবে কোচ পিকে’র কথাও। ষাট-সত্তরের দশকে কলকাতা ময়দান ছিল পিকে-ময়। তাঁর ভোকাল টনিকেই একসময় মাত ছিল কলকাতার দুই প্রধান ক্লাব। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান— দুটোতেই কোচিং করিয়েছেন তিনি। একই মরসুমে মোহনবাগানকে আইএফএ শিল্ড, রোভার্স কাপ, ডুরান্ড— তিনটে মেজর কাপই জিতিয়েছিলেন। অমল দত্ত-পিকে ব্যানার্জি’র চিরকালীন দ্বৈরথ দেখতে মুখিয়ে থাকত বাঙালি। কিংবদন্তি এই ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানিয়েছে ফিফাও। ২০০৪ সালে ফিফার তরফ থেকে সেন্টেনিয়াল অর্ডার অফ মেরিটও পান তিনি। একদম প্রথমদিকের ‘অর্জুন পুরস্কার’ প্রাপকদের মধ্যেও পিকে ছিলেন।

আরও পড়ুন
অলিম্পিকে ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক তিনি, ডাক পেয়েছিলেন আর্সেনাল ক্লাব থেকেও

দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। এই বছরেরই শুরুর দিকে বুকে সংক্রমণের জন্য ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। সেখানেই ভর্তি ছিলেন এতদিন। ৮৩ বছর বয়সে এসে থামলেন প্রদীপ ‘পিকে’ বন্দ্যোপাধ্যায়। রেখে গেলেন ফুটবলের স্মৃতি, ময়দানের অতীত…                

More From Author See More