ধরুন, আপনার ট্রেন বিধাননগর স্টেশন ছেড়ে এগিয়ে চলেছে শিয়ালদার দিকে। হঠাৎ কাঁকুড়গাছির কাছে আপনি দেখতে পাবেন লাইনের ধারে ছোট্ট মন্দির, উপরে লেখা ‘লাইনেশ্বর শিব’। চমকে উঠবেন নিশ্চয়ই, শিবের এমন নাম দেখে? সেটাই স্বাভাবিক! ইনি হাল আমলের দেবতা। খোঁজ করলে জানতে পারবেন ট্রেন দুর্ঘটনার থেকে রক্ষা করার জন্যই এই শিবঠাকুরের উৎপত্তি।
একটু সজাগ থাকলে রাস্তাঘাটে চলার পথে এরকম অনেক ‘নতুন’ শিবঠাকুরই পাবেন। তেমনই আরেকজন ‘বেকারেশ্বর শিব’। এই বেকারেশ্বর শিবে মন্দির হুগলির হিন্দমোটরে অবস্থিত। একদা এলাকার বেকার ছেলেরা মিলে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এখানে পুজো দিলে কেউ নাকি আর বেকার থাকে না।
আরও পড়ুন
প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হত কলকাতার যে রাস্তায়
টেনশন ঠাকুরের কাজকারবার আরো আজব রকমের! ইনি অবশ্য শিব নন। সদ্য জন্ম নেওয়া এই ঠাকুর নাকি লোকেদের টেনশন নিবারণ করেন। এই ঠাকুরের মন্দির কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে। কী, মাথা ঘুরে যাচ্ছে তো? এখনও তো আরেকজন বাকি! আজ, যার গল্প বলব, তিনিও আরেক শিব। ‘বাবা হাইকোর্টেশ্বর’।
হাইকোর্টেশ্বর? তিনি আবার কে? জানেন না তো? না-ই জানতে পারেন। কিন্তু হাইকোর্ট চত্বরে যাঁদের নিয়মিত যাতায়াত, তাঁদের কাছে এই নামটি নতুন নয়। কিরণশঙ্কর রোডে অবস্থিত এই হাইকোর্টেশ্বর মহাদেবের মন্দির। মামলা মোকদ্দমার রায় বেরনোর আগে, উকিল থেকে মক্কেল সবাই জয়ের আশায় একবার এই দেবতার থানে মাথা ঠেকিয়ে যান। বাদ যান না বিচারপতিরাও। কেউ কেউ করেন মানতও। আবার সেই মানত পূর্ণ হলে ভরিয়ে দিয়ে যান প্রণামীতে। দৈনিক আয় নেহাত কম নয় তাঁর। আর শিবরাত্রির দিন তো কথাই নেই!
আরও পড়ুন
নালা থেকে উদ্ধার শতাব্দীপ্রাচীন কামান, কলকাতার অজানা ইতিহাস পড়ে ছিল পথেই
শোনা যায়, প্রায় একশো বছর আগে উড়িষ্যার থেকে আসা জগদীশ চন্দ্র গিরি নামক জনৈক ব্যক্তি হাইকোর্ট অঞ্চলের একটি গাছের তলায় এই শিবলিঙ্গ খুঁজে পান। তখন থেকেই চলে আসছে এই হাইকোর্টেশ্বর বাবার পুজো। তবে মন্দির প্রতিষ্ঠা হয় আরো পরে, ১৯৫৬ সালে। এই পড়ায় কখনও না কখনও যেই গেছে সে-ই হাইকোর্টেশ্বর বাবাকে ভুলতে পারেনি। যেমন প্রখ্যাত সাহিত্যিক শংকর। তার একটি লেখাতেও আমরা হাইকোর্টেশ্বরের উল্লেখ পাই। তিনি লিখছেন- "আইনপাড়ায় একজন ‘হাইকোর্টেশ্বর’ ছিলেন, কিন্তু তাঁর দাপট তেমন নয়। তিনি বাদী-বিবাদী দু’পক্ষের কাছ থেকেই আগাম পুজো নিতে আপত্তি করতেন না।"
মন্দিরের গায়ে ফলকে হাইকোর্টেশ্বর মহাদেবের নাম বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি তিনটি ভাষাতেই লেখা আছে। কী অদ্ভুত, না? ক’টা মন্দিরের এই সম্প্রীতির দৃশ্য চোখে পড়ে? হাইকোর্ট চত্বরের এই মন্দির ভাষার সম্প্রীতির বার্তাই দেয়। মন্দিরের অদূরেই রয়েছে একটি মসজিদও, যেখানে মুসলমান মক্কেল ও উকিলেরা গিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন
রবীন্দ্রনাথ ও কাদম্বরীর স্মৃতি সর্বাঙ্গে, ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ লেখার ঠিকানা আজ সাধারণ এক হোটেল
তাহলে, হদিশ তো পেয়েই গেলেন! একবার ঢুঁ মেরে আসবেন নাকি! কে জানে, হাইকোর্টেশ্বরের কৃপায় হয়তো ‘হিল্লে’ হয়ে যেতে পারে আপনারও! আইনের চোখ অন্ধ হোক বা না হোক, বাবা হাইকোর্টেশ্বর যে ‘সদা জাগ্রত’, তা তো ভক্তরা বলেই থাকেন!
চিত্র ঋণ - ফেসবুক
Powered by Froala Editor