বাংলাদেশের বিগত বেশ কয়েক বছরের ক্রিকেটের কথা বললে, তাঁর নাম উঠে আসবেই। সেই সঙ্গে থাকবে তাঁর নেতৃত্বের কথা। প্রবল বিপদে যখন দাঁড়িয়ে আছে টিম, তখন একেবারে সামনে থেকে লড়ে গেছেন তিনি। তাঁরই নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সাম্প্রতিক বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্যও পেয়েছে। সেই মাশরাফি মোর্তাজা সরে দাঁড়ালেন অধিনায়কত্ব থেকে। জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে তৃতীয় একদিনের ম্যাচেই শেষবারের জন্য টসে নামলেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
আরও পড়ুন
১১ বাঙালির হাতে বিশ্বকাপ, ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে দুরন্ত জয় বাংলাদেশের কিশোরদের
একটা সময় বাংলাদেশকে শক্তিশালী দল হিসেবে সেরকম কেউ ধরত না। আশরাফুল, শাকিব, তামিম ইকবাল, মাশরাফি মোর্তাজার মতো ক্রিকেটাররা থাকলেও শেষে গিয়ে সেরকম ফলাফল হত না। কিন্তু গত কয়েক বছরে ছবিটা যেন বদলাতে শুরু করেছে। আর সেই বদলের পতাকা নিয়ে সামনের সারিতে হাঁটছিলেন মাশরাফি। ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় দলের নেতৃত্ব পান। এমনিতেই চোট আঘাতে জর্জরিত ছিল তাঁর কেরিয়ার। কিন্তু এই দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকেই যেন নতুন জন্ম হল পুরো দলটার। একটা অদ্ভুত আবেগ ঢুকে গেল সবার মধ্যে। ২০১৫-এর বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, ’১৭-এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল, এবং ’১৮-তে এশিয়া কাপের ফাইনাল— প্রতিটা জায়গায় তাঁর দল নিজেদের ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। সেই সঙ্গে জুড়ে ছিল আবেগ। যে আবেগ শুধু মাঠে নয়; স্টেডিয়াম ও তার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছিল।
আরও পড়ুন
বড়ো চাকরি ছেড়ে ক্রিকেট, ভালোবাসেন গিটার ও সুমনের গান, অনুষ্টুপের জীবন তাঁর ব্যাটিং-এর মতোই ধ্রুপদী
মাশরাফি তখন ভরসার আরেক নাম। সমস্ত দর্শকদের কাছের ক্যাপ্টেন ছিলেন তিনি। দলের জয়ে যেমন সবাই মিলে আনন্দ করতেন, পরক্ষণেই শান্ত হয়ে যেতেন। সামলে নিতেন সবাইকে। আর সেই দলই হেরে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়তেন মাঠেই। মনে পড়ে এশিয়া কাপের ফাইনালের সেই রাত? ধোনির করা সেই রান আউট থমকে দিয়েছিল বাংলাদেশের এশিয়ার সেরা হওয়ার স্বপ্ন। তাও হাল ছাড়েননি তিনি। একজন ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে কোথাও মনে থেকে যায় না সেই স্বপ্নভঙ্গের কান্না?
আরও পড়ুন
একাই শেষ করলেন পাকিস্তানের ব্যাটিং, এক ইনিংসে ১০ উইকেট অনিল কুম্বলের
এই জন্যই মাশরাফি ছিলেন জনতার ক্যাপ্টেন। যার আঁচ পাওয়া যায় তাঁর অধিনায়কত্বের শেষ দিনে। জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে প্রথম দুটো ম্যাচে বাংলাদেশ সহজ জয় পেয়েছিল। স্টেডিয়ামও সেরকম ভরেনি। কিন্তু মাশরাফির অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর খবর পেয়ে উপচে পড়ে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। প্রত্যেকে দেখতে চেয়েছিল তাঁদের নেতাকে। মাশরাফি এখনই ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছেন না। ২০২৩-এ ক্রিকেট বিশ্বকাপের আগে যাতে নতুন অধিনায়ক প্রস্তুত হয়, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। এখনও খেলা চালিয়ে যাবেন তিনি। ক্রিকেটই যে তাঁর জীবন, তাঁর সবকিছু…