অঞ্জন দত্ত। বাঙালির অন্যতম আইডল। আট থেকে আশি - যে-কোনো বয়সের মানুষের কাছেই প্রিয় তাঁর গান, অভিনয়, সিনেমা। এক সুতোয় তিনি বেঁধেছেন বেশ কয়েকটি প্রজন্মকে। তাঁর অত্যন্ত জনপ্রিয় সৃষ্টি ‘বেলা বোস’। ১৯৯৪-এ মুক্তির পর থেকে মুখে মুখে ঘুরেছে বাঙালির। এ যেন চিরসবুজ অ্যান্থেম। কাউকে চাকরির দিকে ঘুরিয়েছে। কাউকে প্রেমের দিকে। অবসাদ, মুক্তি, আনন্দ, কলকাতার ছবি মাখা এই গান যুগ যুগ ধরে চুপ করে দিয়েছে মানুষকে, ভরসা যুগিয়েছে নানানভাবে। বেলার উত্তর কী হতে পারে এমনটা ভেবেও জন্ম হয়েছে প্যারোডির। সুর একই রেখে অনেকেই লিখেছেন আরও কয়েক লাইন।
আরও পড়ুন
রক্তের ঘাটতি মেটাতে টানা একমাস রক্তদান শিবির, আয়োজনে কলকাতা পুলিশ
‘প্যারোডি’ কথাটা ইংরাজি। কোনো সাহিত্যের অনুকরণ করে নতুন রচনাই প্যারোডি। রবীন্দ্রনাথের কথায় ‘লালিকা’। বাংলা সাহিত্যে প্যারোডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ‘কে বিদেশী মন উদাসী’, গানটির প্যারোডিই প্রথম দেখেছিল বাঙালি। শনিবারের চিঠি পত্রিকায় নজরুল লেখেন ‘কে উদাসী বনগাঁবাসী’। রবীন্দ্রনাথেরও রচনা করা বহু প্যারোডি বাংলা সাহিত্যের সম্বল। সতীশ চন্দ্র ঘটকও সচেতনভাবেই দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কবিতার অবলম্বনে হাস্যরসাত্মক কবিতা লিখেছেন। এই ধারা বজায় রয়েছে। দীপাংশু আচার্য, রিতম সেনের লেখা প্যারোডি রীতিমতো জনপ্রিয়। কিন্তু আশ্চর্য, এবার প্যারোডির সাহায্য নিতে দেখা গেল কলকাতা পুলিশকে!
আরও পড়ুন
একটি সিলিন্ডার থেকেই ১২ জনকে দেওয়া যাবে অক্সিজেন, আবিষ্কার ইন্ডিয়ান নেভির
করোনার লকডাউনেও আটকানো যাচ্ছে না সমাগম। পুলিশি ব্যবস্থা কড়া করেও লাভ হচ্ছে না কোনোভাবেই। ‘পেন ইজ মাইটার দ্যান সোর্ড’। প্রচলিত প্রবাদবাক্যের কথামতো, শাসনের থেকে সাহিত্যের পরিধি অনেক বেশি। তাই প্যারোডির সাহায্য নিল পুলিশ। বেছে নিল অঞ্জন দত্তের সেই আইকনিক ‘বেলা বোস’ কেই। কলকাতা পুলিশকে হাতে মাইক নিয়ে দেখা গেল গান গাইতে। ‘একুশদিনের ছোট্ট অপেক্ষার’ আর্জিই ছিল তাতে।
আরও পড়ুন
দিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম বদলে যাচ্ছে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে
করোনার দাপটের মধ্যে ইতালি, ফ্রান্সে পুলিশকে দেখা গেছে গান গেয়ে অনুরোধ করতে। ভরসা যোগাতে মানুষকে। সম্প্রতি এন্টালির কাছে একদল মানুষকেও দেখা যায় ‘উই শ্যাল ওভার কাম’ গাইতে। যোগ দিয়েছিল কলকাতা পুলিশও। এই ঘটনার পর আবার ‘বেলা বোস’-এর প্যারোডি। কলকাতা পুলিশের অনবদ্য এক উদ্যোগ। প্রকাশিত ভিডিওতে মোবাইলের আলো জ্বেলে হাত নাড়তেও দেখা গেল বহু মানুষকে। বাড়ির বারান্দা থেকেই। মূল গানের মতোই উচ্ছসিত হয়ে এই প্যারোডিকে গ্রহণ করল মানুষ। লকডাউনের কলকাতা তৈরি করল এক নতুন নজির।