সর্দিকাশি, নাকি করোনা – বুঝিয়ে দেবে যন্ত্রই, আবিষ্কার যাদবপুরের দুই পড়ুয়ার

করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি, ভয়ানক এক আতঙ্কও গ্রাস করেছে সকলকে। সামান্য সর্দিকাশি নিয়েও দানা বাঁধছে সন্দেহ। বাজারে বা রাস্তায় কেউ একটু কেশে উঠলেই আশেপাশের মানুষদের কপালে দেখা যাচ্ছে চিন্তার ভাঁজ। তবে এই অহেতুক সন্দেহের এবার অবসান ঘটতে চলেছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পড়ুয়া তৈরি করে ফেলেছে এমনই এক যন্ত্র, যা তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেবে সন্দেহজনক সেই কাশির উৎস করোনা ভাইরাস, নাকি অন্য কিছু।

আরও পড়ুন
গার্হস্থ্য হিংসার শিকার পড়ুয়া, আশ্রয় দিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাই

সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এই যন্ত্রের কথা জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক ও টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দুই পড়ুয়া অন্বেষা ব্যানার্জি এবং অচল নীলহানি লকডাউনের মধ্যেই বাড়িতে বসে এই অভিনব যন্ত্রের মডেল তৈরি করেছে। ইতিমধ্যে আইসিএমআর এই যন্ত্রের বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছে। তাছাড়া চিকিৎসকরাও বিশেষভাবে প্রশংসা করেছে এই যন্ত্রটির। যদিও এখনও চূড়ান্ত পরীক্ষানিরীক্ষা হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খুব শিগগিরই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব বাজারে আসবে এই যন্ত্র।

আরও পড়ুন
লকডাউনে বিক্রি বন্ধ, প্রিয় হকার-কাকুদের পাশে প্রেসিডেন্সির ছাত্রছাত্রীরা

অন্বেষা এবং অচল ইতিমধ্যে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বিরল সাফল্যের অধিকারী। গত মাসে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি আয়োজিত একটি প্রতিযোগিতায় তাদের উদ্ভাবিত ভেন্টিলেটর যন্ত্রটি পৃথিবীর মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে। আর তারপরেই এই আবিষ্কার। অডিও-ভিজুয়াল ডিটেকশন সিস্টেমের সাহায্যে এই যন্ত্রটি করোনা সংক্রমণের উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে পারবে। ফলে কোনরকম শারীরিক সংস্পর্শের দরকার হবে না। আর একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে এই যন্ত্র। কোয়ারেন্টাইন সেন্টার, অফিস, ক্লাসরুম এবং কমিউনিটি সেন্টার সহ যেসব জায়গায় মানুষের ভিড় দেখা যায়, সেখানেই কাজে আসতে পারে এই যন্ত্র।

আরও পড়ুন
কলকাতাতেও হবে প্লাজমা থেরাপির ব্যবহার, মেডিক্যাল কলেজে শুরু প্রস্তুতি

লকডাউনের জন্য বন্ধ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন। কিন্তু থেমে নেই গবেষণার কাজ। করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত একাধিক গবেষণা তো চলছেই, সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ও গবেষকদের সঙ্গে মিলে পড়ুয়ারা তৈরি করছেন মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই তৈরি হয়েছে একটি কমিউনিটি কিচেন। পড়ুয়ারা সেখানে দুঃস্থ মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছেন খাবারের প্যাকেট। শুধুই তো নির্জীব পড়াশুনোর জায়গা নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়িত্বটিকেও কোনোদিন অস্বীকার করেনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। আর এই করোনা মহামারীর সময়েও সেই ছবিটাই ফুটে উঠতে দেখা গেল আবার। এভাবেই সবসময় মানুষের পাশে থাকুক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। আর সেইসঙ্গে অবশ্যই অপেক্ষা থাকবে নতুন এই যন্ত্রের বাজারে আসার। ক্রমবর্ধমান আতঙ্কের পরিস্থিতি যে তাতে অনেকটাই প্রশমিত হবে, সেকথা বলাই বাহুল্য।