করোনা থেকে বাঁচতে হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন, কিন্তু সকলের জন্য এক্ষুনি নয়

দেশে ক্রমশ বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও। কলকাতায় করোনা আক্রান্ত প্রৌঢ়েরও মৃত্যু হল। এরই মধ্যে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের টাস্ক ফোর্স আপাতত করোনার চিকিৎসার জন্য ম্যালেরিয়ার একটি ওষুধের কথা ঘোষণা করে। দীর্ঘ গবেষণার পর যে ওষুধ ইতিমধ্যেই অনেক জায়গায় ব্যবহার করা শুরু হয়ে গিয়েছিল।

আরও পড়ুন
কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে করোনায় প্রথম মৃত্যু, মারা গেলেন দমদমের বৃদ্ধ

পোশাকি নাম ‘হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন প্রফাইল্যাক্সিস’। গোটা বিশ্বে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে এর অন্যতম পরিচিতি। এবার তাকেই করোনার চিকিৎসায় লাগাতে চলেছেন চিকিৎসকরা। অবশ্য বিশ্বের বেশ কিছু জায়গায় আগেই পরীক্ষামূলকভাবে এর ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেখানে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এই ওষুধ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকরী হচ্ছে। ফ্রান্স, ইতালি, জর্ডন-সহ নানা দেশে এই হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন সফলভাবে প্রয়োগও করা হয় । তখন থেকেই ওইসব দেশে এই ওষুধে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন
দুর্গতের জন্য রাস্তায় খাবারের প্যাকেট রেখে আসছেন মানুষ, মানবতার ছবি ইস্তাম্বুলে

ভারতেও কিছু জায়গায় প্রয়োগ করা হচ্ছিল। কিন্তু ছাড়পত্র মেলাটাই বাকি ছিল। আইসিএমআরের টাস্ক ফোর্স তাতেই সিলমোহর দিল। তবে এই ওষুধটির ব্যাপারে চূড়ান্ত সতর্কও করে দিচ্ছেন তাঁরা। এই ওষুধ কখনই প্রধান প্রতিষেধক নয়। ওষুধ বলা হয়েও, সেই অর্থে করোনার জন্য নয় এটি। প্রতিষেধক নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। যেহেতু এটায় কিছুটা কাজ দিচ্ছে, তাই অবস্থার গুরুত্ব বুঝে এর ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে। বলা ভালো, রোগীর বাড়ির ঘনিষ্ঠ লোকেরা, বা তাঁর ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীরা এই ওষুধটি কেবলমাত্র ‘এমারজেন্সি প্রিভেনটিভ ইস্যু’-তে, অর্থাৎ আপতকালীন অবস্থায় ব্যবহার করতে পারবেন। তাও অত্যন্ত সাবধানে।

আরও পড়ুন
বিশ্বজুড়ে মেডিক্যাল পরিষেবা সহজলভ্য করতে ক্লাউড ওয়েবসাইট আলিবাবা-র

এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক ডাঃ শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক প্রহরকে জানিয়েছেন, “এই ওষুধটি, অর্থাৎ হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন আরও বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। তবে যেটা বারবার মনে রাখা দরকার, এটা কখনই করোনার টিকা নয়। যেহেতু কাজ দিয়েছে, তাই আপাতত এটাকে ব্যবহার করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তাও অতি সাবধানে। এটা সবার আগে বুঝতে হবে। এটা কখনই প্রতিষেধক নয়। দয়া করে কেউ বাইরে দোকানে গিয়ে এই ওষুধ কিনবেন না। আইসিএমআরের নির্দেশিকাতেও বলা আছে সেই কথা। ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিক্যাল স্টাফ— যারা কোভিড১৯-এ চিকিৎসা করছেন, তাঁদের এটা ব্যবহার করার কথা বলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে রোগীর বাড়ির লোকেদের; তাও ডাক্তারের সঠিক পরামর্শ নিয়ে। এই ওষুধের বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। হার্টের অসুখ হতে পারে। হতে পারে ডায়েরিয়াও। এই সব কিছু মাথায় রেখে ব্যবহার করতে হবে। তবে এই ওষুধটি এমন দুর্যোগেও ব্যবহার করা যায়। সেটাই ভালো। সেটাই এখন আশার আলো। তবে আবারও বলছি, সবার জন্য নয় এটি। এটাই একমাত্র উপায় বা প্রতিষেধক নয়। অন্যান্য সুরক্ষাবিধিগুলোও অবশ্যই মেনে চলতে হবে।”   

আরও পড়ুন
ইতালির মৃত্যুমিছিল রুখতে এগিয়ে এলেন কিউবার ডাক্তাররা, সার্বিয়াকে সাহায্য চিনের

আপাতত এতেই জীবন খুঁজে পাচ্ছেন সবাই। যেভাবে হোক, করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে হবে আমাদের। কিন্তু সবাই মিলে, চোখ বন্ধ করে এটিকে খাওয়া যাবে না। মেডিক্যাল কাউন্সিলের নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম দিন ৪০০ মিলিগ্রাম করে দিনে দুবার খাওয়া যাবে। পরের সাত সপ্তাহ একই ডোজে একবার। কিন্তু এই সমস্তটাই করতে হবে ডাক্তারের কঠোর পরামর্শে। সবার জন্য নয় এই ওষুধ। বারবার এই কথাতেই জোর দিচ্ছেন ডাক্তাররা। সেই সঙ্গে অন্যান্য প্রতিরোধ ব্যবস্থাও মেনে চলতে হবে অবশ্যই। সেটাই সবার আগে দরকার। কাজেই সুস্থ থাকুন, সতর্ক থাকুন। বাড়ির ভেতরে থাকুন।