মরচে থেকে তৈরি হাইড্রোজেন, জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্পের হদিশ বিজ্ঞানীদের

পৃথিবীতে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিমাণ প্রতিদিন একটু একটু করে শেষ হয়ে আসছে। তার মধ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়া পরিবেশে পরিত্যক্ত কার্বন। কার্বন নিঃসরণের উপর রাশ টেনে না ধরলে ৫০ বছরের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাবে পরিবেশের ভারসাম্য। তাই জীবাশ্ম জ্বালানিকে ‘না’ বলার সময় এসে গেছে। কিন্তু অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেও উপযুক্ত কোনো বিকল্পের সন্ধানে দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। নতুন কিছু প্রযুক্তির সাহায্যে আংশিক বিকল্পের ব্যবস্থা হলেও, জীবাশ্ম জ্বালানির মতো সর্বংসহা জ্বালানি বলতে একমাত্র হাইড্রোজেনের উপরেই ভরসা করতে পারছেন বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন
পেট্রোলের বিকল্প সমুদ্র-শৈবাল, পরিবেশ দূষণ কমাতে নতুন জ্বালানির হদিশ

কিন্তু হাইড্রোজেন জ্বালানির ব্যবহারের চ্যালেঞ্জও কম নয়। প্রথমত, হাইড্রোজেন যেহেতু খুব হালকা গ্যাস, তাই সঞ্চয় ও পরিবহনে ঝুঁকি প্রচুর। তার উপর জল বা মিথেন থেকে হাইড্রোজেন গ্যাস নিষ্কাশনের পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে এই দুদিকেই জোর দিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় চার দশক ধরে বেশ কিছু ফল পেয়েছেন গবেষণায়।

আরও পড়ুন
কয়লা নয়, জ্বালানি হাইড্রোজেন : দূষণ কমাতে নতুন পদক্ষেপ জার্মানির

স্বল্প খরচে হাইড্রোজেন গ্যাস নিষ্কাশনের অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। অধ্যাপক কেনিচি কাৎসুমাতার নেতৃত্বাধীন গবেষণা দলটি তাদের পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেছেন ইউরোপের 'কেমিস্ট্রি' জার্নালে। ফটো-ইলেকট্রিক এফেক্টের সাহায্যে অত্যন্ত সহজে হাইড্রোজেন নিষ্কাশন করতে পেরেছেন তাঁরা। ফটো-ইলেকট্রিক এফেক্টের সাহায্যে হাইড্রোজেন নিষ্কাশনের প্রযুক্তি যদিও ৭০-এর দশকেই আবিষ্কার হয়েছে। তবে এতদিন এই পদ্ধতিতে অনুঘটক হিসাবে ব্যবহার করা হত টাইটেনিয়াম। এই ধাতুর খরচ প্রচুর এবং সহজে পাওয়াও যায় না। তবে নতুন গবেষণায় লোহার গায়ে জন্মানো এক ধরনের সহজলভ্য মরচেকে ব্যবহার করা হয়েছে অনুঘটকের কাজে। আলফা FeOOH নামের এই মরচে ব্যবহার করে পারদ ও জেনন শিখার উপস্থিতিতে জল থেকে হাইড্রোজেন নিষ্কাশন করেছেন গবেষকরা।

আরও পড়ুন
রান্নার তেলে ছুটবে গাড়ি, পরিবেশ বান্ধব নতুন প্রযুক্তি ভারতে

এই পদ্ধতিকে বাণিজ্যিক উপায়ে কীভাবে ব্যবহার করা যাবে, তাই নিয়ে গবেষণা চলছে। আপাতত সেই দিকেই তাকিয়ে সবাই। তবে বৃহৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় হাইড্রোজেন জ্বালানি ব্যবহার করতে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা দরকার। আশা করা যায় বিজ্ঞানীরা খুব শিগগিরি সেই কাজে সাফল্য অর্জন করতে পারবেন। তখন জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারের আর দরকার থাকবে না। কার্বন নিঃসরণের হাত থেকে রেহাই পাবে পৃথিবী।