ফুটবল ম্যাচ থেকে শুরু আন্তর্জাতিক যুদ্ধ, ১৯৬৯ সালে ঘটেছিল এমনটাই

কথায় বলে, খেলার মাঠও নাকি একটা ‘যুদ্ধক্ষেত্র’। প্রতিদিন সেখানে সংগ্রামে অংশ নেয় সবাই। শুধু খেলোয়াড়রাই নন, ‘যুদ্ধের’ অংশ হয়ে ওঠেন সমর্থকেরাও। এগুলো তো চলতি কথা। কিন্তু খেলার মাঠও একেবারে আক্ষরিকভাবে রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছিল একটা সময়। দুই দেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ফুটবলের যুদ্ধ চলে গিয়েছিল বড়ো ক্যানভাসে। ম্যাচের পরেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে উভয় পক্ষই। শুরু হয়ে পৃথিবীর ইতিহাসের একমাত্র ‘ফুটবল যুদ্ধ’।

আরও পড়ুন
ভাঙল হাড়, তাও চালিয়ে গেলেন খেলা; মহিলা ফুটবলারের কীর্তি

খানিক পেছনে দেখা যাক। ১৯৬৯ সালে মেক্সিকো সিটির আজটেক স্টেডিয়ামে চলছে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। ফিফা বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার জন্য যোগ্যতা অর্জনের ম্যাচ। সামনের বছরই মেক্সিকোতে শুরু হবে বিশ্ব ফুটবলের সেরা প্রদর্শনীর। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দুই দল— একদিকে এল সালভাদর; অন্যদিকে হন্ডুরাস। দুই দেশের মধ্যেই নানা সমস্যা, ঝামেলা। হন্ডুরাস আয়তনে বড়ো হলেও, জনসংখ্যার দিক থেকে এল সালভাদর ছিল আগে। এদিকে সেই সালভাদর থেকে ৩ লাখেরও বেশি মানুষ জমি কিনে বসবাস করতে থাকেন হন্ডুরাসে। এতেই প্রমাদ গোনে অন্য পক্ষ। ১৯৬৭-এ নতুন জমি আইন এনে সালভাদরবাসীর ওই জমিগুলোকে ছিনিয়ে নিতে আরম্ভ করে। এর জেরেই দুই দেশের মধ্যে তৈরি হয় অশান্তি। যা বাড়তে বাড়তে অত্যন্ত ঘোরালো হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।

আরও পড়ুন
কাঁটাতারের মাঝখানে লাগানো ঢেঁকি, খেলার মাধ্যমেই সম্প্রীতি দু’দেশের বাসিন্দাদের

এমন অবস্থাতেই শুরু হয় ফুটবল ম্যাচ। হন্ডুরাসেই প্রথম লেগের ম্যাচ হয়েছিল। ঘরের মাটিতে ১-০ স্কোরে এগিয়ে শেষ করে তারা। পরের লেগ স্বাভাবিকভাবেই হয়েছিল এল সালভাদরে। সেখানে সালভাদররা প্রতিপক্ষকে ৩-০ স্কোরে গুঁড়িয়ে দেয়। দুটো ম্যাচেই সমর্থকদের মধ্যে অশান্তি, ঝামেলা গিয়েছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে। শেষ লেগটি হয় মেক্সিকোতে। তার আগেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। উত্তাপ ছিল চরমে। যেকোনো মুহূর্তে আবারও বড়ো আকারের ঝামেলা বাঁধতে পারে। এর মধ্যেই এল সালভাদর আবারও হন্ডুরাসকে হারিয়ে দেয় ৩-২ গোলে।

আরও পড়ুন
খেলা আসলে বাঁচারই লড়াই, শিখিয়েছিলেন যে শিক্ষকরা

ব্যস, আগুনে ঘি-টাই পড়া বাকি ছিল। ওই খেলাটা তো শুধু একটা ফুটবল ম্যাচ ছিল না; ওটাও তো একরকমের যুদ্ধই ছিল। কেউই জমি ছাড়তে চাইছিল না যে! জুলাই মাসে শুরু হল ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’। দুই পক্ষেই বেজে উঠল রণডঙ্কা। বোমা, গুলি, প্লেন— সমস্তটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল সবাই। মোট ১০০ ঘণ্টা ধরে চলেছিল এই যুদ্ধ। দুই পক্ষেই বহু মানুষ মারা গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ হলেও, সেনাবাহিনীর টহল চলতে থাকে।

আরও পড়ুন
১৭০ বছর আগেই হারিয়েছিলেন সাহেবকে, ভুলে যাওয়া এক বাঙালি দাবাড়ুর গল্প

ফুটবল শুধু খেলা নয়। কিছু কিছু জায়গায় সেটা যেন সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে যায়। বিশেষ করে লাতিন আমেরিকার দেশগুলির প্রতিটা শ্বাসে, ছন্দে, কথায় জড়িয়ে আছে এই খেলা। কিন্তু একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার নজির কি খুব একটা দেখেছে বিশ্ব?

Latest News See More