আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। বাদ যায়নি ভারতও। মুখ্যমন্ত্রী ২২শে মার্চ ঘোষণা করেছেন, পশ্চিমবঙ্গ লকডাউনের। ইতিবাচক পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে। সংক্রমণ রুখতে সরকার জানপ্রাণ দিয়ে মাঠে নেমে পড়লেও, পশ্চিমবঙ্গের মতো জনবহুল রাজ্যে করোনা মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমনটাই আশঙ্কা ডাক্তারদের। মারণ ভাইরাস মোকাবিলার উত্তর প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর হাতেই নেই, ভারত তো কোন ছাড়। এমনকি নূন্যতম পরিকাঠামো, হাতিয়ার পৌঁছয়নি সাধারণ মানুষের কাছে। বস্তিবাসী, সাধারণ নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণী-মধ্যবিত্ত শ্রেণী প্রমাদ গুনছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার - কিংবা মুখোশের কালোবাজারি চলছে বিভিন্ন অঞ্চলে। মানুষের হাতে হ্যারিকেন ধরিয়ে রেখেছে করোনা।
আরও পড়ুন
আবিষ্কার মাত্র ৫৪ বছর আগে, অখ্যাত নার্সের তৈরি ‘ফর্মুলা’ই আজ রুখছে সংক্রমণ
এমতবস্থায় দেখা যাবে একঝাঁক ফেরেস্তার মতোই ঝাঁপিয়ে পড়েছে ছাত্রসমাজ। বেথুন-ব্রেবোর্ন-আশুতোষ-মওলানা আজাদ-সুরেন্দ্রনাথ কলেজ ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। WHO-র নির্দেশাবলি মেনে তারা ঘরে-কলেজ ল্যাবরেটরিতে তৈরি করছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। বানাচ্ছে সংক্রমণ রোধক মুখোশ। তারপর অকুতোভয়ে অল্প দামে তা বিক্রি করছে সাধারণ মানুষকে। কিংবা বিলিয়ে দিচ্ছে মহকুমা-বস্তি অঞ্চলে।
আরও পড়ুন
বাড়িতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে বাজারে বিতরণ, উদ্যোগে ব্যারাকপুরের তরুণরা
লেডি ব্রেবোর্ন, বেথুন ও মওলানা আজাদ কলেজের ছাত্রছাত্রীরা প্রথম নিজেদের অশিক্ষক কর্মচারীদের জন্যই বানিয়েছিলেন এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার। সেই খবর প্রচার মাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়ার ফলে অনুরোধ আসতে থাকে ঘনঘন। ফলে নিরলস ভাবে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরি ছাত্রছাত্রীদের সামাজিক উদ্যোগ, "এডুকেশন ফর অল" সম্প্রতি সহজে 'হ্যান্ড স্যানিটাইজার' তৈরি করার উপায়, রেখেছিল একটি ভিডিওতে। প্রবল সাড়া মিলেছে গণমাধ্যমে। সুতরাং, তারাও স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করার প্রচেষ্টায় রয়েছে।
আরও পড়ুন
অসহায় বৃদ্ধাদের জন্য একমাসের খাবার, সঙ্গে আশ্রয়ের নিরাপত্তা, উদ্যোগ কলকাতার নাগরিকদের
আশুতোষ ও সুরেন্দ্রনাথ কলেজের কিছু ছাত্রও নিজেদের মতো বিলি করছে, করোনা আটকানোর খড়কুটো। যাদবপুর সংলগ্ন এইটি বি বাসস্ট্যান্ডে মানুষের হাতে তারা ঢেলে চলেছে সাবান। ছড়িয়ে দিচ্ছে সতর্কবার্তা।
এছাড়াও যাদবপুরের প্রাক্তনী ও বর্তমান কিছু ছাত্রছাত্রী ও গবেষকরা, প্রায় ৩০০ মাস্ক ও ৬ লিটার স্যানিটাইজার বানিয়ে বিলি করেছেন, সংলগ্ন বস্তি-ঝুপড়ি এলাকাগুলোয়। প্রাক্তনী, ও এই কর্মকাণ্ডের একজন উদ্যোক্তা দেবযান সেনগুপ্ত লিখছেন, ‘সাধারণ মানুষদের থেকেই প্রায় উঠেছে ১৭০০০ টাকা। যার মধ্যে ১৬০০০ টাকাই খরচ হয়ে গিয়েছে স্যানিটাইজার-ও মাস্ক বানাতে…’
আরও পড়ুন
কমছে দূষণ, বাড়ছে পাখি-প্রজাপতির সংখ্যা; স্তব্ধ কলকাতায় অন্যরকম প্রাণসঞ্চার
এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে অভিযান চালাচ্ছে যুবসমাজ। অশোকনগর ও ঝাড়গ্রামে তারা ছড়িয়ে দিচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। করোনা মোকাবিলায় এদের ভূমিকা, মানুষে মানুষে বেঁধে বেঁধে থাকার নতুন নজির গড়ে তুলছে। সারা দেশেই যখন এমন টানটান পরিস্থিতি, তখন এমন উদ্যোগ প্রশংসা পাচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। আগামীতে করোনাকে ঠেকাতে এই ছোটো-ছোটো পদক্ষেপগুলিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেবে। এই লড়াইয়ে সকলেই বন্ধু। বিচ্ছিন্ন থেকেও পাশাপাশি থাকার এটাই সময়। বাকিটা ভবিষ্যতের হাতে…