গত শতাব্দীর ষাটের দশক। ক্যালিফোর্নিয়ার বেকারসফিল্ডের একটি হাসপাতালে কাজ করছেন কয়েকজন নার্স। তাঁদের মধ্যে আছেন একজন লাতিন আমেরিকান তরুণীও; নাম লুপি হার্নান্ডেজ। কাজ করতে করতে হঠাৎই খেয়াল করলেন একটি জিনিস। অ্যালকোহল বা স্পিরিটের সঙ্গে জেল, গ্লিসারিন ব্যবহার করলে যে তরল পদার্থটি তৈরি হয়, সেটি সাবান বা জলের মতোই কাজ করে। যখন এই দুটোর কিছুই কাছাকাছি উপস্থিত থাকবে না, তখন এটাকে ব্যবহার করা যায়। জীবাণুদের হাত থেকে পরিচ্ছন্নও থাকা যায়। ব্যস, এখান থেকেই পথ চলা শুরু একটি নতুন মেডিক্যাল দ্রব্যের। এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রতিটি জায়গায় যার কথা ছড়িয়ে গেছে। যার খোঁজে দোকানের বাইরে লম্বা লাইন। হ্যাঁ, সেই বিশেষ তরল দ্রব্যটির নাম হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
আরও পড়ুন
‘বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার’, মহামারী রুখতে ওরস্যালাইন তৈরি বাঙালি চিকিৎসকের
লুপি হার্নান্ডেজের হাত ধরেই গোটা বিশ্ব চিনেছিল একে। হাসপাতালে হোক, বা বাড়ি— সমস্ত জায়গায় আজ অতি প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল কমোডিটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার। ১৯৬৬ সালে লুপি এর ফর্মুলা আবিষ্কার করার পর সাধারণত হাসপাতালগুলোতেই এটি ব্যবহৃত হতে থাকে। অবশ্য সেই প্রয়োজন থেকেই এটির জন্ম। সেখানেই এটির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। কিন্তু সমাজের বাকিদের কাছে স্যানিটাইজার পৌঁছচ্ছিল না। লুপি বুঝতে পারেন, এই জিনিস যা তৈরি করা অত্যন্ত সহজ, সঙ্গে মানুষের উপকারেই কাজে আসবে; তাকে বাজারে নিয়ে যেতেই হবে। একটি টেলিভিশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে তিনি একে জনতার সামনে নিয়ে আসেন।
আরও পড়ুন
কোষবিভাজন থামাবে যন্ত্র, ক্যানসার রোধে যুগান্তকারী আবিষ্কার ভারতীয় বিজ্ঞানীর
বাকিটা, ইতিহাস। আমেরিকার প্রায় সমস্ত ওষুধের কোম্পানি লুফে নেয় এই ফর্মুলা। তৈরি হয়ে বোতলবন্দি হতে থাকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। হাসপাতালে প্রতিটা অপারেশন বা রোগী দেখার পরই হোক, বা বাড়িতে-রাস্তায় সাবান না থাকলে হাত জীবাণুমুক্ত রাখা— সবেতেই ভরসার নাম এটি। আর এখন? সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এই যাবতীয় কর্মকাণ্ডের পর একটি নাম পেছনেই থেকে গেছে। স্বয়ং লুপি হার্নান্ডেজ না থাকলে এই জিনিস কি আসত? বা এলেও হয়তো অনেক সময় লাগত। কিন্তু আজকে বহু লোকের প্রাণ বাঁচানোর পেছনে রয়েছেন যে মানুষটি, তাঁকে একবার মনে করাই যায়; নয় কি!