কোলে মৃত ছেলে, লকডাউনে ৮৮ কিমি হেঁটে শ্মশানে পৌঁছলেন বাবা

বাড়িতে গুরুতর অসুস্থ পাঁচ বছরের ছেলে। কিন্তু কিছুই করতে পারছেন না দরিদ্র, অসহায় বাবা। দেখতে দেখতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল ছেলেটি। গোটা পরিবারের শোকে ভেঙে পড়ার কথা; কিন্তু তখন মাথায় এল আরও একটি চিন্তা। এই ফুটফুটে বাচ্চাটিকে দাহ করা হবে কেমন করে? খুব কাছের শ্মশানও যে ৮৮ কিমি দূরে! আর এখন সব জায়গায় চলছে লকডাউন। কেউ তো রাজিও হবে না নিয়ে যাওয়ার জন্য। কী করবেন তাঁরা? বাধ্য হয়ে উপায় খুঁজে নিলেন বাবা। মৃত ছেলেকে কোলে নিয়ে একাই ৮৮ কিমি পথ হাঁটলেন তিনি। করোনায় স্তব্ধ দেশ সম্প্রতি এমনই একটি মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকল।

আরও পড়ুন
গ্রামবাসীদের কাছে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিচ্ছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা

ঘটনাটি ঘটেছে অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলায়। সেখানেই একটি দোকানে সামান্য কাজ করতেন মঞ্চল মনোহর। সংসারে অভাব; কিন্তু আয়তনে খানিক বড়োই। মনোহর এবং তাঁর স্ত্রীর তিন তিনটে সন্তান। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোটোটি হল দেবা। পাঁচ বছর বয়স তাঁর। দেশে যখন করোনার জেরে ভয়াবহ পরিস্থিতি, সেই সময়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে বাচ্চাটি। না, করোনায় আক্রান্ত হয়নি সে। গলায় ইনফেকশন হয়ে যায়। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে আরও শরীরের অবনতি হয়। বড়ো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন ডাক্তাররা। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন মনোহর। কী করে নিয়ে যাবেন ছোট্ট ছেলেকে? দেশে যে ততদিনে শুরু হয়ে গেছে লকডাউন। কোথাও গাড়ি-ঘোড়া কিচ্ছু চলছে না! এদিকে হাতে টাকাও যে নেই…

আরও পড়ুন
খাবারের জন্য লম্বা লাইন, কেউ বাড়ি ফিরছেন পায়ে হেঁটেই; ‘অসহায়’ দিল্লির ছবি

পরদিন থেকেই ওই ছেলেটির নাক মুখ থেকে রক্ত বেরোতে আরম্ভ করে। অবস্থা শেষের দিকে যেতে বেশি দেরি হয়নি। মারা যায় পাঁচ বছরের ফুটফুটে দেবা। মৃত্যুর পর আরও এক চিন্তায় পড়েন মনোহর। দাহ করবেন কী করে? শ্মশান তো সেই ৮৮ কিমি দূরে! কোনো গাড়িও চলছে না। তাহলে কি শেষ মুহূর্তেও শান্তি পাবে না ছেলেটা? মনোহর ঠিক করে নিলেন গন্তব্য। পাঁচ বছরের ছোটো ছেলেটির মরদেহ বুকে করে হাঁটা শুরু করেন তিনি। হেঁটেই পাড়ি দেন ৮৮ কিমির পথ। দাহ সম্পন্ন করেন ছেলের। লকডাউনের ভারত এমন দৃশ্য দেখবে বলেই কি বসেছিল? রোগ সচেতনতার পাশাপাশি ভারতের অন্য দিকও উঠে আসছে এর ফলে। যে দিকের মানুষগুলো বড়ো অসহায়, বড়ো দরিদ্র। করোনা আসুক বা যা কিছু, তাঁদের দুর্দশা কখনও থামেনা…

Latest News See More