পায়ো স্কোয়ারের রাস্তায় আদিবাসীদের বিজিয়মিছিল। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আনন্দে আত্মহারা শতাধিক নরনারী। তাঁদের সঙ্গে এসে দাঁড়িয়েছেন দেশবিদেশের অনেক মানুষ। এসেছেন লিওনার্দো ডি-কাপ্রিও, মার্ক রুফালোর মতো সেলিব্রেটিরাও। এই লড়াই যেন তাঁদের প্রত্যেকের লড়াই। সর্বোপরি মানুষের অস্তিত্বের লড়াই। আর প্রায় ৮ বছরের শেষে মিলল আইনি সাফল্য।
আরও পড়ুন
ক্রমাগত কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ, প্রবল সংকটে আমাজনের অরণ্য
কথা হচ্ছে ইকুয়েডরের একটি জনস্বার্থ মামলা নিয়ে। মামলার বাদী পক্ষে ছিলেন সেখানকার প্রাচীন ওয়াওরানি উপজাতির মানুষরা। আর অন্যদিকে ইকুয়েডরের সরকার এবং একাধিক তেল কোম্পানি। ২০১২ সালে এই কোম্পানিগুলির কাছে সরকার বিক্রি করে দিয়েছিলেন ৫ লক্ষ একর বনভূমি। কোন বন? আমাজনের বিখ্যাত ক্রান্তীয় বনভূমি। হ্যাঁ, পৃথিবীর ফুসফুস বলে পরিচিত যে বনভূমি। মানুষের লালসার শিকার হয়ে কিন্তু ইতিমধ্যে বেশ শুকিয়ে এসেছে সেই বন। অসংখ্য গাছ কাটা পড়েছে গত সত্তর বছরে। আর ইকুয়েডর সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী এবার একলাফে সেই সংখ্যাটা বেড়ে যেত অনেকটাই।
আরও পড়ুন
ভেঙে পড়ছে গাছ, পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে বাঁচাল চেন্নাই-এর স্কুল
তবে এসবের মধ্যেই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ওয়াওরানি উপজাতির মানুষরা। বনের মধ্যেই যে তাঁদের জীবন কাটে। তাই জীবন দিয়ে রক্ষা করতে হবে বনকে। মামলা গেল আদালতে। এর মধ্যে অনেক হুমকি, অনেক প্রলোভনের শিকার হতে হয়েছে আদিবাসী মানুষদের। কিন্তু হাল ছাড়েননি তাঁরা। আর অবশেষে মিলেছে সাফল্যও। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে নিম্ন আদালতের রায়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, বনের অধিবাসীদের অনুমতি ছাড়া কোনো গাছ কাটা যাবে না। বিজয়ের সেই শুরু। এরপর সরকার উচ্চতর আদালতে আপিল করে। কিন্তু সেখানেও আগের রায়ই বহাল থাকে।
আরও পড়ুন
একাই লাগিয়েছেন ৫০০০ গাছ, বাঁকুড়ার গ্রামজুড়ে আজ ‘গাছদাদু’র ছায়া
এরপর আর জয়ের আনন্দ বাঁধ মানেনি। পায়ো স্কোয়ারের রাস্তায় উল্লাসে ফেটে পড়লেন ভূমিপূত্ররা। আর এই ঐতিহাসিক রায়ের সাক্ষী থাকতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন দেশবিদেশের বহু মানুষ। আদিবাসীদের সঙ্গে জয়ের আনন্দ ভাগ করে নিলেন তাঁরাও। এই সাফল্য যেন তাঁদের প্রত্যেকের সাফল্য।
আরও পড়ুন
প্রতিটি নবজাতকের জন্য ১০টি করে গাছ লাগাবে হাঙ্গেরি সরকার, প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রীর
আজকাল চারিদিকে তো পরিবেশের বিপন্নতার কথা উঠছে। কথা উঠছে বনসৃজনের। আর এর মধ্যেই সরকারি উদ্যোগে কেটে ফেলা হচ্ছে বহু বনাঞ্চল। বনভূমিকে আঁকড়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলো বাধা দিচ্ছেন সর্বত্র। কিন্তু কতটুকুই বা সামর্থ্য তাঁদের? উল্টোদিকে যে অর্থলোলুপ সভ্য মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে ইকুয়েডরের এই রায় আশার আলো দেখায় বৈকি। অরণ্য না বাঁচলে মানুষের অস্তিত্বই তো বিপন্ন হবে।