শুধু সাধারণ নাগরিকই নন, নিয়ম ভাঙছেন বিদেশ-ফেরত ডাক্তাররাও, সচেতনতার ঘাটতি সর্বত্র

মার্চ মাসেরও অর্ধেক পেরিয়ে গেছে। এখনও দাপট থামেনি করোনা ভাইরাসের। বরং প্রতিদিন নতুন করে আক্রান্ত ও মৃতের খবর পাওয়া যাচ্ছে বিশ্ব জুড়ে। পশ্চিমবঙ্গেও নানারকম উদ্যোগ ও সচেতনতা নেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে চারজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনের সঙ্গেই বিদেশ-যোগ। সেই সূত্রে রাজ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বিদেশ থেকে ফিরলেই তাঁকে পরীক্ষা করাতে হবে এবং কোয়ারান্টাইনে যেতে হবে। কিন্তু সেটা কি করছেন নাগরিকেরা? বিভিন্ন ঘটনা সেটা আদৌ প্রমাণ করছে না। বেশিরভাগ চিকিৎসকই ঝুঁকি নিয়ে দিন-রাত পরিষেবা দিচ্ছেন। কিন্তু কয়েকজন অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে বিদেশ থেকে ফিরে নিয়ম ভেঙে রোগী দেখছেন।

আরও পড়ুন
বিদেশের সঙ্গে যোগ নেই, করোনায় আক্রান্ত দমদমের বৃদ্ধ – কী অপেক্ষা করছে ভবিষ্যতে?

এমনই অভিযোগের মুখে পড়েছেন বসিরহাটের এক নামী ডাক্তার। কয়েকদিন আগে আমেরিকা থেকে ফিরেছেন উনি। নিয়ম অনুযায়ী, সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করার কথা তাঁর। দরকারে নিজেকে সেলফ আইসোলেশনেও রাখা যেত। তিনি নিজে একজন চিকিৎসক, এই ব্যাপার সাধারণ মানুষের থেকে অনেক ভালো করে জানবেন তিনি এমনটাই আশা করা স্বাভাবিক। কিন্তু তিনি তা করলেন না। পরীক্ষা, আইসোলেশন কোনোটাই করলেন না; বরং রোগী দেখে গেলেন এই কদিন। এমনকি, বসিরহাটে নিজের নার্সিংহোমেও রোগী দেখা চালিয়ে গেছেন। পরে এই খবর জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে পৌঁছয়। সেখান থেকে নির্দেশ আসলেও, ওই চিকিৎসক সেসব মানতে নারাজ। অথচ তিনিই তো সবচেয়ে ভালো জানবেন এই অবস্থায় ঠিক কী কী করা উচিত। কিছুই করলেন না। এমনকি, আমেরিকায় যাওয়ার কথাও অস্বীকার করেন। এখন পুলিশের সাহায্যে তাঁর নার্সিংহোমটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়; ওই ‘চিকিৎসক’কেও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।

আরও পড়ুন
বন্ধ রেস্টুরেন্ট-বার-মিউজিয়াম-চিড়িয়াখানা, জমায়েত এড়াতে সিদ্ধান্ত রাজ্য প্রশাসনের

অবশ্য বসিরহাটের এই চিকিৎসক একাই নন। এই রাজ্যের একজন বিখ্যাত ডাক্তারের ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি দুবাই থেকে ফিরেছেন ওই চিকিৎসক। নিয়মমাফিক, তাঁরও কোয়ারান্টাইনে থাকার কথা। কিন্তু সেটা করেননি। উল্টে ফিরে এসে প্রথমদিন রোগী দেখেছেন। তার পরে অবশ্য ঘরে নির্বাসন নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই একদিনে তো অনেক মানুষের মধ্যে ছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন
পিছিয়ে গেল উচ্চমাধ্যমিক, জেনে নিন নতুন সূচি

একইরকম ঘটনা ঘটেছে দমদমের এক সাইকোলজিস্টের সঙ্গে। এক্ষেত্রে ঘটনাটা একটু অন্য। ডাক্তারি সূত্রেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই তাঁর চেম্বারে আসেন এক মহিলা। কথায় কথায় জানতে পারেন, ওই মহিলা সম্প্রতি দুবাই থেকে ফিরেছেন। পরে এটাও জানা যায় যে, পেশায় তিনি বিমানসেবিকা। এই সমস্ত ব্যাপার এতদিন চেপে রেখেছিলেন তিনি। আইসোলেশন দূরের কথা, বিভিন্ন জায়গায় তিনি গেছেন, বহু মানুষের সংস্পর্শে এসেওছেন। তিনি কি একবারও জানতেন না করোনা সম্পর্কে? শেষে ওই সাইকোলজিস্টের উদ্যোগে তাঁকে আইসোলেশনে রাখা হয়। শুধু তাই নয়, ওই ডাক্তার নিজেও সেলফ আইসোলেশনে গেছেন।

আরও পড়ুন
বিনামূল্যে রেশন, ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা – করোনা-রোধে সদর্থক ভূমিকা প্রশাসনের

উপরের ঘটনাগুলি একদিক থেকে আমাদের অসচেতন, বেপরোয়া ও দায়িত্বজ্ঞানহীন মানসিকতাকেই প্রকাশ করে। এই রাজ্যের প্রথম করোনা আক্রান্তের ক্ষেত্রেও এই অভিযোগগুলি উঠেছিল। সে যে একা নয়, সেটা পরবর্তী আক্রান্তদের বৃত্তান্ত শুনলেই বোঝা যাবে। তার থেকেও বড়ো কথা, সমাজের একটা অংশ এই মানসিকতারই বিশ্বাসী। এই অংশটা কিন্তু খুব ছোটো নয়। বারবার প্রশাসনের থেকে সতর্ক করা হচ্ছে। বিদেশ থেকে যারা সম্প্রতি ফিরেছেন, তাঁদের উপযুক্ত পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার কথাও বলা হচ্ছে। কিন্তু কোথায় কি? এমনকি যাঁদের হাতে এই গুরুদায়িত্ব, সেই ডাক্তাররাও নিয়ম ভাঙছেন! ওপরের দুটো ঘটনা সেটাই প্রমাণ করে। সেখানেই দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে তৃতীয় ঘটনাটি। সরকারের সম্প্রতি একটি তথ্য বলছে, গত দুই সপ্তাহে কলকাতায় ১৪ হাজার বিদেশি নাগরিক এসেছেন। কিন্তু তাঁরা এখন কোথায়, কী অবস্থায়, কোনো খবর নেই। আর এই বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ফ্রান্স, ইতালি, চিন থেকে আসা লোকও রয়েছে।

আরও পড়ুন
করোনা-সতর্কতা বাংলাদেশে, স্থগিত বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষের অনুষ্ঠান

এখনও অবধি এদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ নেই। কিন্তু সামান্যতম সাবধানতাটুকুও অবলম্বন করেননি। তাঁদের এই ‘দায়িত্ব’ যদি পরে এই রাজ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলে, তাহলে? প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে; বাড়ছে আতঙ্কও…

Latest News See More