ভুটানের রাজধানী থিম্পু। শহরের বুকে বিরাট স্টেডিয়াম চাংলিমিথাং। দিনটা ২১ ফেব্রুয়ারি। স্টেডিয়ামে জড়ো হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। সেদিন যে তাঁদের প্রিয় রাজার জন্মদিন। দেখতে দেখতে চল্লিশের কোঠায় পৌঁছে গেলেন রাজা জিগমে কেশর নামগেল ওয়াংচুক। সেই মুহূর্তটাকে স্মরণীয় করে রাখতে ভুটানের মানুষের উৎসাহের কোনো সীমা নেই। প্রত্যেকের হাতেই রাজার জন্য সামান্য কিছু উপহার। এর মধ্যেই মঞ্চে উঠে এলেন প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে জানালেন, রাজা কিন্তু এসব কোনো উপহারই চান না। তাহলে? কী চান তিনি? কী দেবেন ভুটানের হতদরিদ্র্য মানুষ?
আরও পড়ুন
পরিবেশ বাঁচাতে ৫০ লক্ষ গাছ লাগানোর উদ্যোগ মেক্সিকোয়
জনতার কাছ থেকে রাজা যা চাইলেন তা এককথায় অনবদ্য। সোরগোল পড়ে গিয়েছে বিশ্বের সর্বত্র। বললেন, তাঁর জন্মদিনের উপহার হিসাবে যেন প্রত্যেকে একটি করে গাছ বা একটি অসহায় প্রাণীর দায়িত্ব নেন। পৃথিবীর বুক থেকে যখন প্রতিদিন একটু একটু করে সবুজ মুছে যাচ্ছে, তখন এর থেকে ভালো উপহার আর কীই বা হতে পারে? রাজা জিগমে কেশর তাই নিজের জন্মদিনের উদযাপনে একটু সবুজের ছোঁয়া দিতে চাইলেন তাঁর দেশে।
আরও পড়ুন
বন্ধুত্বে বাধা নয় দূরত্ব – চেন্নাইয়ের কাছিম ও এক প্রবাসী ভারতীয়ের সম্পর্কের গল্প
এমন উদ্যোগ কিন্তু ভুটানে প্রথমবার নয়। ফিরে যাওয়া যাক ২০১৬ সালে। ভুটানের রাজপরিবারে জন্ম নিল একটি শিশু। রাজার প্রথম সন্তান। নবজাতকের উপহার হিসাবে কী চাইলেন রাজা? সেদিনও তিনি চাইলেন, প্রতিটি পরিবার যেন একটি করে চারাগাছ লাগায়। রাজার এই অনুরোধে সাড়া দিলেন ভুটানের মানুষ। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই অনুরোধের পর ১ লক্ষ ৮ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে ভুটানে।
আরও পড়ুন
একাই লাগিয়েছেন ৫০০০ গাছ, বাঁকুড়ার গ্রামজুড়ে আজ ‘গাছদাদু’র ছায়া
চলতি বসন্তেই রাজবাড়িতে জন্ম নিতে চলেছে আরেক সন্তান। সেই উপলক্ষে গাছ লাগানোর ধূম লেগে গিয়েছে ইতিমধ্যে। সবুজায়ন যেন সেদেশে আর কোন প্রকল্প নয়। একটা রাষ্ট্রীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। পৃথিবী জুড়ে পরিবেশের বিপন্নতা আর জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে যেন আশার আলো দেখাচ্ছে ভুটান। ছোট্ট দেশের সেই আহ্বান সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়লে, আমাদের হয়তো আর ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো চিন্তাই করতে হবে না। তাই রাজা জিগমে কেশরের জন্মদিনে আপনিও চাইলে তাঁকে উপহার দিতে পারেন। তাতে রাজা তো খুশি হবেন নিশ্চয়ই, সঙ্গে সুরক্ষিত থাকবে আগামী প্রজন্মও।