আচ্ছা, আপনি কি খুব বোকা হতে ভালোবাসেন? প্রশ্নটাও আপনার ‘বোকা বোকা’ লাগতে পারে। কে আবার শখ করে বোকা হতে চায়! কার ভালো লাগে! আবার অনেকে বোকা বনে গিয়েও আনন্দ পান। কিন্তু বছরের একটা দিন বোধহয় কেউই বোকা হলে সচরাচর রাগেন না। অনেকে নিত্যনতুন ফন্দি বের করে অপরকে মজার ফাঁদে ফেলার জন্য। সবকিছুই তো এই একটা দিনকে ঘিরেই! যেমন বলা হয় ‘বুরা না মানো হোলি হ্যায়’; তেমনই হয়তো এপ্রিলের প্রথম দিনটিতে শোনা যাবে ‘বুরা না মানো এপ্রিল ফুল হ্যায়’!
আরও পড়ুন
২৯ নয়, পৃথিবীর দুটি দেশে ফেব্রুয়ারির হিসেব হয়েছিল ৩০ দিনেই
মজা করার কোনো দিন থাকে নাকি! প্রতিটা সময় হাজার চাপ, স্ট্রেস থেকে খানিক মুক্তি পেতে আমরা তো মজা করতেই চাই। তাহলে এপ্রিল ফুলের বিশেষত্ব কী? একটু পেছনে ফিরে দেখা যাক। এপ্রিল মাসের পয়লা তারিখের বিশেষ কিছু ইতিহাস আছে। একটা সময় বছর শুরু হত এই তারিখ থেকে। সে অবশ্য বহুযুগ আগের কথা। শুধু রোমান বা খ্রিস্টীয় সংস্কৃতিতে নয়, বিশ্বের আরও বেশ কিছু জায়গায় এপ্রিল মাস থেকেই বছর শুরু হয়। বাঙালিদের পয়লা বৈশাখই খেয়াল করে দেখুন। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় যা আসে প্রতিবার। ১৫৮২ সালে পোপ গ্রেগরি দ্য থার্টিন নতুন একটি ক্যালেন্ডারের কথা ঘোষণা করেন, যা আজ সবাই মেনে চলছি। হ্যাঁ, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। পয়লা জানুয়ারি হয়ে যায় নতুন বছরের প্রথম দিন। কিন্তু অনেকেই মানতে পারেননি এই নিয়ম। পুরনোকেই আঁকড়ে ধরে চলতে চাইছিলেন। ধীরে ধীরে বাকিদের কাছে মজার খোরাক হয়ে যান তাঁরা। ১ এপ্রিল এলেই ওই মানুষগুলো আরও বেশি করে হাসির পাত্র হন। ধীরে ধীরে রোম থেকে বেরিয়ে গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে এই ব্যাপারটি। মনে করা হয়, এভাবেই এসেছে ‘এপ্রিল ফুল’-এর ধারণা।
আরও পড়ুন
দিনে সাড়ে ২৩ ঘণ্টা, বছরে ৩৭২ দিন; প্রাগৈতিহাসিক পৃথিবী ছিল এমনই
তবে এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন অনেকে। প্রমাণ হিসেবে দেখিয়েছেন ইংল্যান্ডের ইতিহাস। ১৭৫২ সালের আগে ব্যাপকভাবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রচলিত হয়নি ওই দেশে। কিন্তু এপ্রিল ফুল ততদিনে চলে এসেছে সেখানে। তাহলে আগের তত্ত্ব দিয়ে কী করে ইতিহাস প্রমাণ করা যাবে? অন্যদিকে আরও একটি ঘটনাও উঠে এল। এবারের জায়গা কনস্টানটিনোপল। তখন সিংহাসনে সম্রাট কনস্টানটাইন। প্রত্যেক রাজার দরবারে যেমন বিদূষকরা থাকেন, তাঁর সভাতেও তেমনই ছিল। আর কিছুই না, সারাক্ষণের ভারী পরিবেশ থেকে একটু মুক্তি দিতেন তাঁরা। এইরকমই একদিন রাজসভার সেই বিদূষকরা সম্রাট কনস্টানটাইনকে বললেন, চেষ্টা করলে তাঁর থেকেও ভালো রাজ্য পরিচালনা করতে পারবেন তাঁরা। কনস্টানটাইনও মজা পেলেন। একজনকে দায়িত্বও দিয়ে দিলেন; সে একদিনের জন্য রাজা হল। পুরো ব্যাপারটাই মজার জন্য। ওই দিনটি ছিল এপ্রিলের প্রথম দিন। ‘একদিনের রাজা’ সেই বিদূষক ঘোষণা করলেন এই বিশেষ দিনটি এরকম বিশুদ্ধ মজার জন্যই তোলা থাকল। যে মজা কাউকে আঘাত দেবে না, আহত করবে না। ব্যস, শুরু হয়ে গেল এপ্রিল ফুল!
আরও পড়ুন
১১ মিনিটের ‘সমস্যা’য় জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারির, মেয়েরা ছেলেদের প্রেমপ্রস্তাব দিতেন এই দিনে
এখন তো ইঁদুরদৌড়ের দুনিয়া। কারোর এক মুহূর্তও বসার সময় নেই। সবসময় ঘিরে আছে টেনশন, চাপ, অনিদ্রা, স্ট্রেস। বেড়ে যাচ্ছে আত্মহত্যার মতো ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে একটু মজা, একটু ইয়ার্কি যদি আপনাকে ভালো রাখতে পারে, তো ক্ষতি কী! না হয় একটু বোকাই হলেন। কিন্তু আখেরে যে উপকার হচ্ছে নিজেদেরই। কাউকে আঘাত দেয় না যে মজা, সেটা কি করে সাজা হতে পারে! ইতিহাস তো ইতিহাসের জায়গায়, বর্তমানেও এপ্রিল ফুল হয়ে উঠুক বেঁচে থাকার মন্ত্র।