মানুষ এই পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত প্রাণী। সমাজব্যবস্থার উন্নততম প্রকরণ তার আছে। আর আজকের পৃথিবীতে সবচেয়ে উন্নত সমাজব্যবস্থা বলতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এই ব্যবস্থা কিন্তু বেশি পুরনো নয়। মোটামুটি ফরাসি বিপ্লবের সময় থেকেই গণতন্ত্রের ইতিহাস শুরু ধরে নেওয়া যায়। তবে মজার ব্যাপার হল, পশুপাখিদের মধ্যেও কিন্তু গণতন্ত্র চলে। চলে ভোটাভুটি। একটা সমাজ বেঁধে যারা থাকে, নানা ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত নিতে দ্বৈরথ তো হয়ই। আর সেক্ষেত্রে ভোটাভুটিকেই শ্রেষ্ঠ উপায় বলে মনে করে সবাই। স্তন্যপায়ী থেকে পতঙ্গ, প্রত্যেকের মধ্যেই এই ব্যবস্থা বর্তমান। আসুন এক নজরে দেখে নিই কয়েকটি প্রাণীর ভোটাভুটির ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন
আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে, অন্য প্রাণীদের নিজের বাসায় আশ্রয় দিল এই প্রাণী
উদবিড়াল বা মিরক্যাট
আফ্রিকার এই প্রাণীটি সাধারণত ছড়িয়ে ছিটিয়েই থাকে। এদের যে নিজস্ব সমাজ আছে, সেকথা বিশেষজ্ঞরা বহুদিন অবধি জানতেন না। কিন্তু প্রত্যেকে প্রত্যেকের থেকে প্রায় ৩০ ফুট দূরত্বে থাকার পরেও নিজেদের মধ্যে যথেষ্ট সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখে এরা। এমনকি কোন কারণে বাসস্থান পরিবর্তন করতে হলেও একসঙ্গেই পরিবর্তন করে প্রত্যেকে। এখন ধরুন, কোন দিকে যাওয়া হবে তাই নিয়ে দ্বন্দ্ব উপস্থিত হল। তখন সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে ভোটাভুটিই পন্থা। দুটি উদবিড়াল দুদিকে গিয়ে দাঁড়ালো। বাকিরা তাদের পছন্দ মতো কোন এক জনের পিছনে গিয়ে দাঁড়াবে। এভাবে যার দল ভারী হবে, সেদিকেই যাবে প্রত্যেকে।
আরও পড়ুন
বিলুপ্ত ও বিপন্ন জলজ প্রাণীদের স্মরণে কেরালায় তৈরি হল সমাধিক্ষেত্র
মৌমাছি
মৌমাছির যে একটা সুশৃঙ্খল সমাজ আছে, একথা টন আমরা সবাই জানি। প্রত্যেক চাকে থাকে একটি রাণী মৌমাছি, চার পাঁচটি পুরুষ মৌমাছি আর বাকিরা কর্মী মৌমাছি। কোন কারণে একই বাসায় দুটি রাণী মৌমাছি জন্মালে আবার নতুন জায়গা খুঁজতে হয়। অথবা পুরনো জায়গা থেকে বিতাড়িত হয়েও নতুন জায়গা খুঁজতে হয় অনেক সময়। এই জায়গা খোঁজার কাজটাও কিন্তু কর্মীরাই করে। প্রত্যেকে একবার করে গিয়ে দেখে আসে জায়গাটা কেমন। আর রাণীর কাছে এসে নেচে নেচে বর্ণনা দেয়। বর্ণনা বলতে, জায়গাটা ভালো না খারাপ। রাণী বসে বসে সেই নাচের হিসাব রাখে। যদি দেখা যায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতে জায়গাটা বেশ ভালো, তাহলে সেখানে যাওয়া হয়। আর যদি বেশিরভাগই মনে করে সেখানে যাওয়া উচিত হবে না, সেক্ষেত্রে নতুন জায়গার সন্ধান করা হয়।
আরও পড়ুন
নিষিদ্ধ রাসায়নিকের প্রভাব, ৫০ কোটিরও বেশি মৌমাছির মৃত্যু ব্রাজিলে
আফ্রিকান জংলি কুকুর
আমাদের দেশে, প্রত্যেক পাড়ায় কুকুরদের নিজস্ব এলাকা আছে। অন্য পাড়ার কুকুর সেখানে লেজ নামিয়ে বেশ জড়োসড়ো হয়ে থাকে। কুকুর প্রাণীটা সব জায়গাতেই বেশ 'ডিসিপ্লিনড'। আর আফ্রিকা দেশের জংলি কুকুরদের তো রীতিমতো মিলিটারি কায়দা। প্রতিদিন স্কোয়াডে দাঁড়ানোর মতো লাইন দিয়ে দাঁড়ায় সবাই। তারপর জঙ্গল চত্বর ঘুরে দেখে। এরপর ঠিক করা হয় সেদিন আদৌ শিকার করা হবে কিনা! আর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ভোটাভুটির মাধ্যমেই। শিকারের বিপক্ষে থাকলে সেই কুকুর চুপচাপ থাকে। আর শিকার করতে আগ্রহী হলে ভোট হিসাবে দেয় একটি করে হাঁচি। তবে ভোট গ্রহণের পর যদি ঠিক হয় শিকারে যাওয়া হবে, তাহলে সবাইকেই যেতে হবে। আর নাহলে খিদেয় পেট মোচড় দিয়ে উঠলেও শিকার করা যাবে না।
আরও পড়ুন
আর মাত্র ৫০ বছর, বিলুপ্তির পথে জীবজগতের এক-তৃতীয়াংশ – জানালেন বিজ্ঞানীরা
তাহলে দেখছেন তো -- স্তন্যপায়ী হোক বা পতঙ্গ, কুকুর হোক বা বিড়াল -- গণতন্ত্রের প্রতি প্রত্যেকেই কেমন দায়বদ্ধ! মানুষেরও তো উচিৎ গণতন্ত্রকে সম্মান করতে শেখা। সবাইকে একসঙ্গেই তো সভ্যতার পথচলার হদিস খুঁজতে হবে।
তথ্যসূত্র – ‘Sneezing Dogs, Dancing Bees: How Animals Vote’, The New York Times
চিত্রসূত্র - নিউইয়র্ক টাইমস