বাবার জন্মদিন উপলক্ষে, একটি অনাথাশ্রমে মিষ্টি বিতরণ করতে গিয়েছিলেন পুনের তরুণ ইঞ্জিনিয়ার আদিত্য তিওয়ারি। সেখানেই তিনি দেখতে পান একটি ছোট্ট শিশুকে। বয়স বড়োজোর বছরখানেক। এককোণে শোয়ানো। আশেপাশে বিশেষ কেউ নেই। কৌতূহলী হয়ে, ওয়ার্ড্রেনকে জিজ্ঞেস করেন শিশুটির সম্পর্কে। জবাব পান, শিশুটি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত। মারাও যাবে শিগগিরিই।
সেই শুরু। তারপর থেকে নিয়মিত আদিত্য যাতায়াত শুরু করেন সেই অনাথাশ্রমে। ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গিয়েছি, শিশুটির নাম অবিনাশ। ক্রমে, ‘বন্ধুত্ব’ গড়ে ওঠে তাদের। অবিনাশের প্রতি আত্মার টান অনুভব করতে থাকেন আদিত্য। তিনি দেখেছেন, অনাথাশ্রমের খাতায় অবিনাশের কোনো নাম নেই। তারপরই অবিনাশকে দত্তক নিতে উদ্যোগী হন তিনি।
আরও পড়ুন
বড়দিনে ‘ভালো বাবা’ চাই, সান্টাক্লজকে চিঠি ছোট্ট শিশুর
যদিও সে-পথ নেহাৎ সহজ ছিল না। পরিচিত অনেকে বারণ তো করেছিলই, বাধা এসেছিল অন্যান্য মহল থেকেও। কিন্তু হাল ছাড়েননি আদিত্য। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি দত্তক নেন শিশুটিকে। তারপর, সন্তানস্নেহে বড়ো করেছেন তাঁকে। অভাব বুঝতে দেননি মায়ের।
এমনিই গল্প আদিত্য আর অবিনাশের। শিশুটি এখন খেলতেও যায়। এমনকি, বাবা সারাদিনের কাজ সেরে রাতে বাড়ি ফিরলে, খেলা আর পড়াশোনাও চলে দুজনে মিলে। অবিনাশের সঙ্গে মিশে যেন শিশু হয়ে উঠেছেন আদিত্যও। কিংবা, ‘বাবা’ হয়ে উঠেছেন তিনি। অবশ্য ‘মা’ আর ‘বাবা’ – দুটো সম্বোধনই তার কাছে প্রিয়। ভেদ রাখেনি অবিনাশও। রাখবেই বা কেন! তিলে তিলে তার বড়ো হয়ে ওঠার পুরোটা জুড়েই তো আদিত্য, এক ‘সিঙ্গল ফাদার’।
আরও পড়ুন
স্যালুট না জানানো এক বিষণ্ণ বাবা আর ইতিহাস হয়ে যাওয়া সেই ছবির গল্প
রূপকথার এই গল্প শেষ হতে পারত এখানেই। কিন্তু চমক আরও বাকি ছিল। এ-বছরই বেঙ্গালুরুতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বিশ্বসেরা মায়ের সম্মান পেয়েছেন ‘সিঙ্গল ফাদার’ আদিত্য। এই সম্মান যেন এক অর্থে মায়ের প্রকৃত সংজ্ঞাটিকেই হাজির করেছে আমাদের সামনে। মাতৃত্ব শুধু শরীরের নয়, মাতৃত্ব মনেরও। আর অপত্য স্নেহের ক্ষেত্রে, পিতৃত্ব ও মাতৃত্বে ফারাক কখনও কখনও নগণ্যও হয়ে আসে। সন্তানের শুভকামনাই সেখানে বড়ো হয়ে ওঠে। অবিনাশের দায়িত্ব নিজের একার কাঁধে নিয়ে, তা পদে পদে প্রমাণ করে চলেছেন আদিত্যও। আজ, আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবসে, আমরা যেন ভুলে না যাই 'আদিত্য মা'-এর কথাও...