পিঁপড়ের মস্তিষ্কের দখল নিয়ে বংশবিস্তার করে এই ছত্রাক!

প্রশান্ত মহাসাগরের এক নাম না জানা দ্বীপে অদ্ভুৎ উদ্ভিদের কবলে পড়েছিলেন প্রফেসর শঙ্কু। সেই গাছ মানুষের মস্তিষ্ককে পুরোপুরি গ্রাস করে নেয়। তবে মস্তিষ্ক গ্রাস করতে পারে এমন উদ্ভিদের সন্ধান পেতে কল্পবিজ্ঞানের দ্বারস্থ না হলেও চলে। বরং পৌঁছে যাওয়া যেতে পারে ব্রাজিলের ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যে। সেখানে উঁচু উঁচু গাছের নিচের দিকে খোঁজ করতে করতে থমকে যেতে পারেন একটি পাতা দেখে। মাটি থেকে ঠিক ২৫ সেন্টিমিটার উঁচুতে থাকতে হবে সেই পাতাটি। একটু উপরেও নয়, একটু নিচেও নয়। ঠিক ২৫ সেন্টিমিটার উঁচুতে একটি গাছের পাতার ওপর কোনো পিঁপড়েকে (Ant) চুপচাপ বসে থাকতে দেখলেই জানবেন, তার নিজের বোধবুদ্ধি আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সবটাই চলে গিয়েছে এক ছত্রাকের (Fungus) কবলে।

হ্যাঁ, ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যে দেখা মেলে এমনই এক ছত্রাকের। যারা বংশবিস্তারের জন্য বেছে নেয় পিঁপড়ের শরীর। শুধু শরীর নয়, তাদের মস্তিষ্কেরও দখল নেয়। তারপর পিঁপড়েটি নিজের অজান্তেই দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গাছ বেয়ে উঠতে থাকে। ঠিক ২৫ সেন্টিমিটার উপরে এসে থেমে যায়। এই জায়গাটিই ওপিওকর্ডিসেপস নামের ওই ছত্রাকের বেঁচে থাকার সবচেয়ে উপযুক্ত পরিবেশ। সেখানে একটু একটু করে পিঁপড়ের শরীরে ছত্রাকের বংশবিস্তার ঘটতে থাকে। একসময় মাথার পাশ দিয়ে বেরিয়ে আসে শুঁড়ের মতো একটি উপবৃদ্ধি। এই উপবৃদ্ধি আসলে ছত্রাকের রেণুথলি। এখান থেকে রেণু ঝরে পড়ে নিচে। তারপর নিচে থাকা দলের বাকি পিঁপড়েদের শরীরেরও দখল নেয়। এই ছত্রাকের কাণ্ড নিয়েই লেখা হয়েছে ‘দ্য গার্ল উইথ অল দ্য গিফটস’ নামের একটি কল্পবিজ্ঞান কাহিনি। তৈরি হয়েছে একটি ভিডিও গেমও। আর বিগত ৪ বছর ধরে এই ছত্রাকের কাজ পর্যবেক্ষণ করছেন পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক ডেবিড হিউগ।

হিউগের গবেষণার সূত্রে ওপিওকর্ডিসেপসের কাজের ধরন সম্বন্ধে অনেক নতুন তথ্যই জানা গিয়েছে। দেখা গিয়েছে, একটিমাত্র ছত্রাক পিঁপড়ের শরীরে প্রবেশ করার পর অতি দ্রুত উপনিবেশ তৈরি করে। শুধু তাই নয়, একটি পিঁপড়ের শরীরের সমস্ত ছত্রাক নিজেদের মধ্যে যোগাযোগও রাখে। এককোষী ছত্রাকদের নিজের কোনো মস্তিষ্ক নেই। অথচ তাদের চেয়ে অনেক বড়ো প্রাণীর মস্তিষ্কের দখল নিয়ে নিতে পারে তারা। আর সবচেয়ে মজার বিষয়, এর জন্য মস্তিষ্কের আশেপাশে বংশবিস্তারের প্রয়োজন হয় না তাদের। কেবলমাত্র পিঁপড়ের পেশির দখল নিয়ে সেখান থেকেই মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এই ছত্রাক। তবে ঠিক কীভাবে পিঁপড়ে মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করে এই ছত্রাক, তা তিনি এখনও বুঝতে পারেননি। আণুবীক্ষনিক প্রাণীদের মধ্যে যে অজস্র রহস্য ছড়িয়ে আছে, তা বিজ্ঞানীদেরও অবাক করে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বাঙালি গবেষকের নামে নামকরণ নব্যাবিষ্কৃত ছত্রাকের