দেশের বাইরে থাকাকালীন অথবা আন্তর্জাতিক কোনো মঞ্চে দেশের সমালোচনা করা এবার দণ্ডনীয় অপরাধ। বিবেচনা করা হবে দেশদ্রোহিতা হিসাবে। এমনই সিদ্ধান্ত নিল জিম্বাবোয়ের সরকার। সম্প্রতি এই ‘দেশপ্রেম আইন’ প্রবর্তনের পরিকল্পনার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে জিম্বাবোয়ের প্রশাসন। আর সরকারের এই পরিকল্পনা ঘিরেই সে-দেশে তুঙ্গে বিতর্ক।
জিম্বাবোয়ের সাংবিধানিক আইনজীবী এবং বিরোধী দলনেতা লাভমোর মধুকু বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ হিসাবেই চিহ্নিত করছেন। স্পষ্ট ভাষাতেই জানিয়েছেন, কোনো রাষ্ট্রেরই ক্ষমতা নেই দেশপ্রেমের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেওয়ার। তাঁর কথায়, এই আইনের প্রবর্তন গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ। তবে সে প্রতিবাদে কর্ণপাত করতে নারাজ সরকার। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে হঠাৎ এমন আইন প্রবর্তন কেন সরকারের?
ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের অভিমত, দেশের মধ্যে ঐক্য অটুট রাখতেই এই উদ্যোগ। জানানো হচ্ছে ১৯৯৯ সালে বিরোধী দলগুলির উত্থান নষ্ট করেছে দেশের ঐক্যকে। তাদের বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলোচনাই নাকি তৈরি করছে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নষ্ট করা হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। বন্ধ হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগের পথ। এই আচরণকে কোনো আইন ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলেই জানাচ্ছেন ক্ষমতাশীল দলের নেতারা।
তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে বিরোধী দলের সমালোচনার জন্যই কি নষ্ট হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি? নাকি তার পিছনে দায় রয়েছে শাসকদলেরও? বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে আন্তর্জাতিক স্তরে। শ্বেতাঙ্গদের মালিকানাধীন খামার দখল, অর্থনৈতিক তছরুপ, বিরোধী দলনেতাদের হত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন— প্রতিটা ক্ষেত্রেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে সরকারকে। তাছাড়াও অনিয়মিত নির্বাচন এবং ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ তো রয়েইছে। এই অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে বছর খানেক আগেই পদক্ষেপ নিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছিল দলীয় কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল অর্থনৈতিক সাহায্যও।
আরও পড়ুন
স্বৈরাচারের প্রতিবাদ করায় কবিকে নির্মম হত্যা মায়ানমারে
অবশ্য সরকারের বক্তব্য, ইচ্ছাকৃতভাবে বিরোধী দলনেতারা গুজব ছড়িয়েছেন। তাঁদের এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের চাপেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আন্তর্জাতিক কূটনীতিবিদরা। তাই কঠোরভাবেই দেশদ্রোহিতাকে দমন করতে প্রস্তুত রাষ্ট্র। ব্যক্তি তো বটেই পাশাপাশি সমালোচনার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে এনজিও-গুলির বিরুদ্ধেও। এমনটাই জানাচ্ছে প্রশাসন। তবে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার এই পরিকল্পনা যে আন্তর্জাতিক স্তরে আরও কলঙ্কিত করবে জিম্বাবোয়ের ভাবমূর্তিকে, তা একপ্রকার স্পষ্টই…
আরও পড়ুন
শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, স্বৈরাচারের প্রত্যক্ষ উদাহরণ মায়ানমারে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে আফ্রিকান হাতি